শাহবাগে প্রকাশক দীপনকে কুপিয়ে হত্যা


প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৫

রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনার স্বত্ত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সন্ধ্যার দিকে মার্কেটের তৃতীয় তলার ১৩২ নম্বর দোকান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

জাগৃতি প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, বিকেল ৫টার দিকে তিনি দোকানে ঢুকে দীপনকে টেবিলে মাথা নিচু করে শুয়ে থাকতে দেখেন। পরে টেবিলের নিচে রক্ত দেখতে পেয়ে তিনি পুলিশকে খবর দেন। পরে এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, আজিজ সুপার মার্কেটে দীপনের কার্যালয়ে ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে ভেতরে ফেলে রেখে দরজা বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দীপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ঢামেকের আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালিটি) কে এম রিয়াজ মোর্শেদ সন্ধ্যা ৭টায় দীপনকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করেন। দীপনের ঘাড়ের পেছনে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে রিয়াজ মোর্শেদ জানান।

নিহত ফয়সালের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক আবুল কাশেম ফজলুল হক জানান, শনিবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ফয়সাল তার সঙ্গেই বাসায় ছিলেন। পরে তিনি শাহবাগে তার প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানে যান। খোঁজ নেয়ার জন্য তিনি কয়েকবার ছেলেকে ফোন করেন। কিন্তু ছেলে ফোন ধরেননি।

বিকেল ৪টার দিকে তিনি আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় ১৩১ নম্বর রুমের সামনে যান। নিহতের বাবা আরো জানান, ওই সময় তিনি কার্যালয়ের দরজা খুলতে গিয়ে বন্ধ পান। এ সময় কাচের দরজা দিয়ে ভেতরে আলো জ্বলতে দেখেন। ছেলে বাইরে গেছে ভেবে তখন তিনি সেখান থেকে চলে যান।

পরে ছেলের বউকে ফোন করলে জানতে পারেন, দুর্বৃত্তরা লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেছে। এ কথা শুনে তিনি লোকজন নিয়ে আবার ছেলের কার্যালয়ে গিয়ে দরজা ভেঙে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় তার ছেলে পড়ে আছে।

জাগৃতি প্রকাশনার ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রকাশনার কার্যালয়ে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে দরজা অটোলক করা রয়েছে। ভেতরে ঢুকে তাকে (দীপনকে) জখম অবস্থায় উপুড় হয়ে মেঝের উপর পড়ে থাকতে দেখি। মেঝেতে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। শাহবাগ থানায় খবর দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এদিকে আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম নামের একটি সংগঠন। তারা নিজেদের আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস) দাবি করে।

রাত ৯টার দিকে টুইটারে করা টুইটে এ দায় স্বীকার হয়। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়। তাতে লেখা ছিল, ‘আমরা আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা এ হত্যার দায় স্বীকার করছি।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ (মিডিয়া) বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মুনতাসিরুল ইসলামও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আনসার আল ইসলাম নামের একটি জঙ্গি সংগঠন এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

তবে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়া তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমেও কারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে।

এঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, এই বর্বরতা মেনে নেয়া যায় না। সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

দীপনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ঢাবি উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। হামলাকারীদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফয়সাল আরেফিন দীপনের স্ত্রী চিকিৎসক। তার দুই ছেলে-মেয়ে। তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার্থী আজ। আর মেয়েটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একুশের বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বত্তরা হয়। হামলায় আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ।

জাগৃতি থেকে অভিজিৎ​ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ও ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ নামের দুটি বই প্রকাশিত হয়। আর শুদ্ধস্বর তার লেখা ‘সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ ও ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ নামে দুটি বই প্রকাশ করে।

এআর/জেইউ/এসআইএস/এএইচ/আরআইপি/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।