বেকায়দায় সিলেটে সমশের মবিন চৌধুরীর অনুসারীরা


প্রকাশিত: ০৩:৫৫ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৫

সিলেট বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দুইটি পক্ষে বিভক্ত। একটি সমশের মবিন চৌধুরী অপরটি নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সমশের বলয়ের নেতারা তাদের প্রিয় নেতার এমন পরিণতিতে হতাশ। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে তারা কাকে নেতা মেনে রাজনীতি করবেন এ নিয়ে অনেকটাই বেকায়দায় সমশের অনুসারীরা। সমশের অনুসারীরা জাগো নিউজের কাছে এমন হতাশা ব্যক্ত করেন।

নাম প্রকাশে না করার শর্তে তার অনুসারী এক নেতা বলেন, তিনি দলের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন এটা জানতাম। কিন্তু পদত্যাগ করতে পারেন এমন কিছু চোখে পরেনি।

এদিকে, ইলিয়াস অনুসারী নেতারা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন।

অন্যদিকে, সমশের মবিন চৌধুরীর দল থেকে পদত্যাগের একদিন পর আকস্মিক সিলেট সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি থেকে সমশের মবিনের চৌধুরীর পদত্যাগে দলের কোনো ক্ষতি হবে না।

ফখরুল বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। এই দলে অনেক বড় বড় কূটনীতিক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রয়েছেন। যারা দলের কূটনৈতিক বিষয়াদি দেখার দক্ষতা রাখেন। এ সময় তিনি বিএনপি ভাঙার গুজবও উড়িয়ে দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সমশের মবিনের পদত্যাগের বিষয়টি দলের চেয়ারপারসনকে জানানো হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শমসের মবিন পদত্যাগ করেনি, দল থেকে অবসর নিয়েছেন।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, সিলেট বিএনপির একটি বড় অংশ সমশের মবিন চৌধুরীকে নেতা মেনেই রাজনীতি করতেন। সমশের মবিন সিলেটে আসলে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করাসহ তাকে নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতেন ওই নেতারা। সব সময় সমশেরের আশপাশে থাকতেন তারা। সিলেট বিএনপি কিভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে সমশের উঠতে-বসতে বুদ্ধি দিতেন।

জানা যায়, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওযার পর তার অনুসারী আরিফুল হক চৌধুরী, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ওই বলয়ের নেতারা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। সিলেট বিএনপিতে তখন চাঙা হয়ে ওঠেন এম ইলিয়াস আলী অনুসারীরা। এমন অবস্থায় সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপিতে যোগ দিয়ে প্রয়াত সাইফুর অনুসারীদের অভিভাবক হিসেবে আর্বিভুত হন।  

এরপর থেকে সাইফুর অনুসারীদের নেতৃত্বে ছিলেন সমশের মবিন চৌধুরী আর ইলিয়াস আলী নেতৃত্ব দেন তার অনুসারীদের। মূলত জেলা বিএনপির নেতৃত্ব ছিলেন ইলিয়াস অনুসারীদের দখলে আর মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব চলে যায় সমশের মবিন চৌধুরী অনুসারীদের দখলে।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী গাড়িচালকসহ নিখোঁজ হলে ইলিয়াস অনুসারীরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন সিলেটের রাজনীতিতে। পরে অবশ্য ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা ওই পক্ষের হাল ধরেন।

এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিএনপি থেকে সমশের মবিনের আকস্মিক পদত্যাগে এবার হতাশ সাইফুর-সমশের অনুসারী নেতারা। ইলিয়াস অনুসারী নেতারা সমশের মবিনের পদত্যাগে উল্লসিত। তারা এখন অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। এই অংশের নেতারা বলছেন সমশের মবিন দল থেকে বিদায় হওয়ায় সিলেটের ওয়ান ইলিভেনের সুবিধাভোগী নেতারা এখন দল থেকে চলে যাবেন। ফলে তৃর্ণমূলের ত্যাগী নেতারা মূল্যায়িত হবেন।

সিলেটে সমশের মবিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কাহের শামীম বলেন, সমশের মবিন চৌধুরী এভাবে পদত্যাগ করায় সিলেটবাসী ক্ষুব্ধ ও হতবাক। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যখন দেশের বাইরে-দলের এমন দুঃসময়ে এখন এসব না করলেও পারতেন তিনি। দলের ভেতর ভিন্নমত-মতবিরোধ থাকতেই পারে, তাই বলে পদত্যাগ মেনে নেয়া যায় না।

সমশের মবিনের পদত্যাগে সিলেটবাসী মর্মাহত বলে মন্তব্য করেছেন তার অনুসারী সিলেট মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সিলেটবাসী একজন হেভিওয়েট রাজনীতিবীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। জাতীয় পর্যায়ে সিলেট নেতৃত্ব শূন্য হবে। তিনি সর্বশেষ সিটি নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনের অবদান রেখে বিএনপিকে এর সফলতা এনে দিয়েছেন। তাই তার এভাবে রাজনীতিকে বিদায় বলে দেয়ায় আমরা হতাশ।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এই প্যানেল মেয়র আশা প্রকাশ করে বলেন, দেখা যাক কি হয়-এখনও ম্যাডামের কাছে পদত্যাগপত্র পৌঁছায় নি। ম্যাডাম দেশে আসলেই সবকিছু সমাধান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

সমশের মবিন বলয়ের নেতারা এখন কোন পথে রাজনীতি করবে এমন প্রশ্নের জবাবে কয়েছ লোদী বলেন, জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতার সিলেটে কোনো বলয় নেই। আমরা মনে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী, সকল নেতাকর্মীই সমশের মবিন চৌধুরীকে শ্রদ্ধা করতেন। তাই তার কোনো বলয় থাকতে পারেনা।

সিলেটে সমশের মবিন অনুসারী নেতারা হলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ হক, বর্তমান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব বদরুজ্জামান সেলিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসিম হোসেইন, জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কাহের শামীম, মাহবুবুর রব ফয়সল, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা যুবদলের সভাপতি আব্দুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, ডা. নাজমুল ইসলাম।

ছাত্রদল নেতাদের মধ্যে তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক  সমাজসেবা সম্পাদক রেজাউল করিম নাচন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাফেক মাহবুব, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী, মহানগর ছাত্রদল নেতা মাহবুবুল করিম জেহিন প্রমুখ। তারা কাকে নেতা মেনে সিলেটে রাজনীতি করবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ছামির মাহমুদ/এআরএ/এমএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।