মেডিকেলে প্রশ্ন ফাঁসের গণশুনানি অনুষ্ঠিত
চলতি বছর মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গঠিত গণতদন্ত কমিশনের উদ্যোগে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) ভবনের তৃৃতীয় তলায় গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি ও প্রমাণ উত্থাপন করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় গণতদন্ত কমিশনের সদস্যরা মনোযোগ সহকারে সকলের বক্তব্য শুনেন এবং তা রেকর্ড করা হয়।
গণতদন্ত কমিশনের আহ্বায়ক ড. আনু মোহাম্মদ বলেন, আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত যে কেউ তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ, ডাকযোগ, ইমেইল, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সম্পর্কিত তথ্যউপাত্ত থাকলে তা জমা দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার তদন্ত কমিটি গঠিত না হওয়ায় বিবেকের তাড়নায় তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গণতদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির সদস্যরা শুধু পরীক্ষার্থী, অভিভাবক কিংবা অন্য কেউ ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা যেমন স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিএমডিসি, বিএমএ, র্যাব, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বক্তব্য গ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যেই তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে সময় চাওয়া হয়েছে। সময় দিলে গণতদন্ত কমিশনের সদস্যরা নিজেরা গিয়ে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে আনবেন ।
তিনি জানান, গণতদন্ত কমিশন সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ প্রাপ্তি সাপেক্ষে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২০নভেম্বরের ডেট লাইন বেঁধে দিলেও তারা অন্তত এক সপ্তাহ আগেই জাতির কাছে গোটা বক্তব্য তুলে ধরবেন বলেও জানান তিনি।
একজন শিক্ষার্থী জানান, রংপুরের ‘রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ থেকে একসঙ্গে ২৪ শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছে।
লাবণ্য নামে এক শিক্ষার্থীর মা জানান, তার মেয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী। মেডিকেলে ভর্তি হতে রাত জেগে পড়াশুনা করেছে। তার পাসের বাসার এক মেয়ে যে পড়াশুনায় ছিল খুবই দুর্বল সে ভাল একটি মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে।
পটুয়াখালীর বাসিন্দা এক শিক্ষার্থী জানান, মেহেদি হাসান নামে তার এক বন্ধু তাকে প্রশ্ন কেনার অফার দিয়েছিল। সে রাজি হয়নি। সেই বন্ধুটি রংপুর মেডিকেলে এবং সেই বন্ধুর বান্ধবী চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাদের সবার বাড়ি একই জেলায় হওয়ায় সে জানতে পেরেছে।
এক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, তার মেয়ের খুব ইচ্ছে ছিল ভাল একটি মেডিকেল কলেজে পড়বে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটার পর সে রাগে দুঃখে ক্ষোভে আর কোথায় পরীক্ষা দেয়নি। সে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে এদেশে আর থাকবে না। তার সঙ্গে বাবা মাকে এই দেশ ত্যাগের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে সে।
আরেকজন শিক্ষার্থী জানান, পরীক্ষা সকাল ১০টায় থাকলেও ৯টায় প্রশ্নপত্রের তিনটি পৃষ্টা ফেসবুকে দেয়া হয়েছে এমন প্রমাণ তার কাছে রয়েছে।
উত্তরার বাসিন্দা হৃদয় নামে এক শিক্ষার্থী জানান, তার পরিচিত কয়েকজন বন্ধু যারা মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য কোচিং করেনি তারাও ভাল মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েছে। প্রশ্নপত্র সর্বনিম্ন ৬ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিএমএ নেতারা তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বিএমএর সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবদুর রউফ সর্দার তাদের বলেছেন, তোমরা বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তি হয়ে যাও। আমার মেয়েও চান্স পায়নি। তাকে প্রাইভেটে ভর্তি করবো। তারা বলেন, টাকা যদি থাকতো তাহলে পুলিশের নির্যাতন সয়ে কেন আন্দোলন করবো।
কোনো কোনো শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পরীক্ষার ফলাফল দুইবার দুই ধরনের নম্বর দেখানো হয়েছে। অনেকেই ভাল পরীক্ষা দিয়েও কম নম্বর পেয়েছে। তারা বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের অফিসিয়াল পেইজ খোলা হলেও সরকারের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি তাদের ১০মিনিট সময় দেন তাহলে তারা যে প্রমাণ দেখাবে তাতে প্রধানমন্ত্রী বুঝবেন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।
গণতদন্ত কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আহমেদ কামাল, আবু সাইদ খান, ডা.শাকিল আহমেদ, এ এন রশিদ, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, মাহমুদুজ্জামান বাবু, রাখাল রাহা, তানজিমউদ্দিন খান ও সামিনা লুৎফা নিতৃা উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের সদস্যরা বলেন, নিরাপত্তার কথা ভেবে শিক্ষার্থীরা কেউ নাম পরিচয় দিতে না চাইলে তারা তা দিতে বাধ্য করছেন না।
এমইউ/এসকেডি/এমএম