ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করুন
অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। ‘ডুয়িং বিজনেস’ শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত যে চিত্র উঠে এসেছে সেটি অনেকটা হতাশাজনক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশের ক্রমাবনতি ঘটছে। আগের তুলনায় দুই ধাপ পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন দেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ পর্যালোচনা করে বিশ্বব্যাংক বলছে, যেসব দেশ বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে ছিল সেগুলো দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। ওসব দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ এগুতে পারছে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ অত্যন্ত জরুরি। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়াটাই হবে সমীচীন।
উল্লেখিত প্রতিবেদনে মোটাদাগে যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে বলা হয়েছে- ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনে জমি কিনলে তার নিবন্ধনে সময় লাগে ২৪৪ দিন। আর ওই জমিতে অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি পেতে লেগে যায় ২৬৯ দিন। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতসংযোগ পেতে সময় লাগে আরো বেশি, গড়ে ৪২৯ দিন যা এক বছর দুই মাসের বেশি। আর এসব সেবার অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের ব্যয় করতে হয় কোটি টাকার বেশি। এটি কোনোমতেই ব্যবসাবন্ধব পরিবেশ হতে পারে না।
এ কথা ঠিক, বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কর্পোরেট কর হার কমানো এবং বিদ্যুত পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যে হারে উন্নতি করছে তাতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে। তাছাড়া অন্যান্য দেশগুলোর সীমান্ত বাণিজ্যে অটোমেশন, ডকুমেন্টেশন ব্যবস্থার উন্নতি হলেও বাংলাদেশে কিছু জটিলতা রয়েছে; যা সূচকে পিছিয়ে পড়ার আরেকটি বড় কারণ। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ব্যবসা শুরু, অবকাঠামো নির্মাণের সুবিধা, বিদ্যুতের প্রাপ্যতা, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণের প্রাপ্যতা, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ পদ্ধতি, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তির বাস্তবায়ন- এসব বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।
মনে রাখা প্রয়োজন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বন্ধ করতে না পারলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কখনোই আকৃষ্ট করা যাবে না। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি। বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থার সৃষ্টি করতে না পারলে পাহাড়সম বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। অর্থের সাইকেলিং যত হবে ততই অর্থনীতিতে গতি আসবে। এ জন্য বিনিয়োগ, পুনর্বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে। যার বা যাদের হাতে টাকা আছে সেটি যাতে বিনিয়োগে আসে এ জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে হবে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্যে এগুচ্ছে। এ লক্ষ্য তখনই বাস্তবায়িত ও টেকসই হবে যখন সত্যিকার অর্থে একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে।এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই।
এইচআর/আরআইপি