ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরল ২৪২ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১৫ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০২০

অডিও শুনুন

এবারের ঈদুল আজহায় সীমিত আকারে পরিবহন চলাচল করলেও কমেনি সড়ক দুর্ঘটনা। দেশের সড়ক-মহাসড়কে সংঘটিত ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪২ জন নিহত হন। আহত হন ৩৩১ জন।

সড়কের সঙ্গে রেল ও নৌ-পথ মিলে ২৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩১৭ জন নিহত এবং ৩৭০ জন আহত হন।

রোববার (৯ আগস্ট) দুপুরে নগরীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন- ২০২০’ প্রকাশকালে এ তথ্য তুলে ধরেন।

সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মতো এবারও প্রতিবেদন তৈরি করে। এতে বলা হয়, প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

accident

করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর গণপরিবহন সীমিত আকারে চালু থাকায় ঈদযাত্রায় ব্যক্তিগত পরিবহন ও ছোট যানবাহনে যাতায়াত বেড়েছে। এ কারণে ব্যক্তিগত পরিবহনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে।

বিগত ২৬ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ দিনে ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪২ জন নিহত এবং ৩৩১ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে রেলপথে চারটি দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌ-পথে ৩৩টি ছোট-বড় বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ৭৪ জন নিহত এবং ৩৯ জন আহত হয়েছেন। ১৭ জন নিখোঁজের খবরও পাওয়া গেছে।

এবারের ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ৪ আগস্ট। এদিনে ২৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হন ৩২ জন।

সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ৮ আগস্ট। এদিনে আটটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। একদিনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের ঘটনা ঘটে গত ৩১ জুলাই। এদিনে ৫৫ জন আহত হন।

এ সময়ে ৮৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০৬ জন নিহত এবং ৬৫ জন আহত হন। এ বছর মোট সংঘটিত ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে ৮৮টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে, যা মোট দুর্ঘটনার ৪৩.৭৮ শতাংশ। মোট নিহতের ৪৩.০৮ শতাংশ এবং মোট আহতের ১৯.৬৩ শতাংশ।

অন্যদিকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা ৫২.২৩ শতাংশ ঘটেছে। আগামী ঈদে এ দুটি ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় ৯৬.০১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

উল্লিখিত সময়ে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১০২ জন চালক, ৬৩ জন পথচারী, ৩৮ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ১৩ জন পরিবহন শ্রমিক, ১১ জন শিক্ষার্থী, পাঁচজন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সাতজন শিক্ষক, সাতজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সাংবাদিক, এবং একজন প্রকৌশলীর পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে নিহত হয়েছেন দুজন পুলিশ সদস্য, একজন সেনাবাহিনীর সদস্য, একজন বিমানবাহিনীর সদস্য, একজন সিআইডির সদস্য, ৮৫ জন চালক, ৫০ জন পথচারী, ৩২ জন নারী, ২৪ জন শিশু, আটজন শিক্ষার্থী, ছয়জন শিক্ষক, নয়জন পরিবহন শ্রমিক, একজন প্রকৌশলী, চারজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের মধ্যে ৩২.৫৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৯.৩৫ শতাংশ বাস, ১৯.৩৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১০ শতাংশ ব্যাটারিরিকশা, ইজিবাইক, ভ্যান, সাইকেল, ৮.০৬ শতাংশ অটোরিকশা, ৭.৭৪ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ এবং ২.৯০ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

দুর্ঘটনার মধ্যে ২৪.৩৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫২.২৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা, ১৫.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায় এবং ৭.৪৬ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩২.৩৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৯.২৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৩.৪৩ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। মোট দুর্ঘটনার ৩.৯৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৯৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে হয়েছে।

উল্লিখিত সময়ে সড়কপথে সিলেটের ওসমানীনগরে বাস-কার সংঘর্ষে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ ছয়জন নিহত হন। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বাস মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে একই পরিবারের তিন সদস্য নিহত ও একজন আহত হন।

accident

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির এএসআই নিহত ও এক কনস্টেবল আহত হন। মেহেরপুরের গাংনীতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে এটিএন নিউজের মার্কেটিং বিভাগের সহকারী ম্যানেজারসহ আরও একজন নিহত এবং একজন আহত হন। ঠাকুরগাঁওয়ের ২৯ মাইল এলাকায় বাস অটোরিকশাকে চাপা দিলে ১০২ বছরের এক বৃদ্ধা নিহত ও চারজন আহত হন।

ঈদযাত্রার শেষের দিনে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় মাইক্রোবাসের চাপায় এক পর্বতারোহী নারী নিহত হন।

এছাড়া নৌ-পথে টাঙ্গাইলের বাসাইলে নৌকাডুবির ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন। নেত্রকোনার মদনে ট্রলারডুবিতে একই পরিবারের আটজনসহ ১৮ মাদরাসার ছাত্র নিহত হন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যাত্রীর যাতায়াত হলেও সেই তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মতো ছোট দেশের সীমিত রাস্তায় ছোট যানবাহনের আমদানি জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ, নিয়ন্ত্রয়ক সংস্থা বিআরটিএসহ ট্রাফিক বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনকে বিকশিত করা জরুরি। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনাকেও মহামারির মতো গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, এডিটরস ফোরামের সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী, ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নুর নবী শিমু, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, জিয়া প্রমুখ।

জেইউ/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।