বৌদ্ধ নিদর্শনে অভিভূত পর্যটন প্রতিনিধি দল


প্রকাশিত: ১১:৩৪ এএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৫

রামুর বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে পর্যটন স্থান হিসেবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের মাধ্যমে পর্যটন সমৃদ্ধ অঞ্চলে পরিণত করতে হবে বাংলাদেশকে। পর্যটক আকর্ষণের জন্য বৌদ্ধ পূরাকীর্তির নিদর্শনগুলোকে বিশ্বের কাছে পরিচয় ঘটাতে হবে। ইতোমধ্যে রামু বৌদ্ধ নিদর্শন সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা রামুর বৌদ্ধ নিদর্শন দেখে এমন মন্তব্য করেছেন।

বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননসহ ১০ দেশের পর্যটনমন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় রামুর উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র ও একশ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বৌদ্ধ মূর্তি পরিদর্শনে আসেন।

Ramu

এ সময় একুশে পদকে ভূষিত উপ-সংঘরাজ পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের, কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, ১০ পদাতিক ডিভিশন রামু সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সরওয়ার হাসান, ৫৬ ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈনুদ্দিন মাহমুদ, উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, ইউএনও সেলিনা কাজী ও মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ভিক্ষু করুনাশ্রী থের অতিথিদের স্বাগত জানান।

প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন, জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) মহাসচিব তালেব রাফাই, আফগানিস্তানের পর্যটনমন্ত্রী আবদুল বারী জাহিনী, ভূটানের পর্যটনমন্ত্রী লেউনফু নরবো ওয়াংচুক, কম্বোডিয়ার পর্যটন উপমন্ত্রী টপ সু পেক, চীনের জাতীয় পর্যটন কার্যালয়ের পরিচালক লি কুয়ানগো, ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক (এনই) শেরাভাট সঞ্জয়, ভিয়েতনামের পর্যটন কর্পোরেশনের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ট্রান ডিন থান, বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত হরি কুমার শ্রেষ্ঠা, আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত আবদুর রহিম ওরাজ ও ভূটানের রাষ্ট্রদূত পেমা চোডেন।

Ramu

রামুর জোয়ারিয়ানালা উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র ও একশ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বৌদ্ধ মূর্তি পরিদর্শনে এলে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছ বিনিময় করেন উপ-সংঘরাজ পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের ও ভিক্ষু করুনাশ্রী থের।

এ সময় পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের বলেন, রামু ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। রামুর বৌদ্ধ নিদর্শন অনেক বছরের পুরনো। বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় রামুর বৌদ্ধ নিদর্শনগুলো দৃষ্টিনন্দনভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সম্প্রীতির অঞ্চল রামুতে শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধরা সুন্দরভাবে নিরাপদে বসবাস করছে। পণ্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের বিদেশি অতিথিদের কাছে রামুর বৌদ্ধ নিদর্শনের পরিচিতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।

বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দল বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রে ২৭ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নে খৃষ্টপূর্ব ৩০৮ সালে সম্রাট অশোক কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেন। এ সময় অতিথিকে বিহারে স্বাগত জানান, বিহার অধ্যক্ষ ভিক্ষু কে শ্রী জ্যোতিসেন থের ও বিহার পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ।

বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদল বিহারে বুদ্ধের বক্ষাস্থী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, সম্রাট অশোকের মূর্তি ও ৬০০ থেকে ১৮০০ শতাব্দীর সাদা পাথর, ব্রোঞ্জ ও পিতলের বিভিন্ন বুদ্ধমূর্তি’র পুরাতত্ত্ব সংগ্রহশালা পরিদর্শন করেন।

Ramu

রাংকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার মহাসচিব তালেব রাফাই বলেন, রামুতে বৌদ্ধ নিদর্শনগুলো অনেক সুন্দর। এটি একটি ঐতিহ্যময় ও ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থান। বিশ্বে এ রকম স্থান বিরল। বিশ্বের অনেক মানুষের এ নিদর্শনগুলো বেশি করে দেখতে আসা উচিত। বাংলাদেশ অচিরেই এ পর্যটন সমৃদ্ধতা অর্জন করবে। সাংস্কৃতিক বিনিময়েও এদেশের পর্যটনে সমৃদ্ধতা আনবে।

পরিদর্শনকালে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যটন সম্মেলন অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ সম্মেলনে ১৩টি দেশের প্রতিনিধির আসার কথা ছিল। ১০ দেশের প্রতিনিধিরা রামু এসেছেন। তার মধ্যে আটজন মন্ত্রী রয়েছেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যটন সম্মেলনই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশে বিদেশিদের নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। বাংলাদেশ কেবল নিরাপদ দেশ নয়। প্রমাণ হলো এদেশে আরো আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, কিছু দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আড়াই হাজার বিদেশি প্রতিনিধি দল আসবে। সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের বৌদ্ধ নিদর্শন দেখতে আসার ব্যাপারে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশ বিদেশের সকল পর্যটকদের জন্যও পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পর্যটন সমৃদ্ধ দেশের প্রতিনিধি দল সকাল ৯টায় রামু সেনানিবাসের পৌঁছান। জিওসির আমন্ত্রণে সকালের নাস্তা সেরে সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে তারা সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা।

রামুতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের বৌদ্ধ নিদর্শন পরিদর্শনকালে আরো উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজারের সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ খোরশেদ আরা হক, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এর আগে বুধবার বিকেলে কক্সবাজারে এসে পৌঁছান বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দল। বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখতে যান তারা। ওই দিন রাতে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারা।

সায়ীদ আলমগীর/এসএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।