দুর্যোগ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন বিরুলিয়ার গোলাপ চাষিরা
‘করোনা দুর্যোগে আমাদের কপাল পুড়েছে। বাগানের গোলাপ বাগানেই শুকিয়ে ঝরে পড়েছে। কত কষ্ট আর যত্ন নিয়ে গোলাপ চাষ করে ফুল ফোটাই। কিন্তু করোনার কারণে নিজের জমিতেই গোলাপ তুলতে পারিনি। বাগানের কাছাকাছি দুজনকে দেখলেই পুলিশ তাড়া দিত। তবে আগের তুলনায় পরিবেশ কিছুটা ভালো হয়েছে। এখন বাগানের গোলাপ অল্পস্বল্প বিক্রি হচ্ছে। শুধু সুদিনের অপেক্ষায় দিন গুনছি।’
মঙ্গলবার (৪ আগস্ট), বিকেল ৩টা। মাথার ওপর প্রখর রোদ। গোলাপের গ্রামখ্যাত সাভারের বিরুলিয়ার শ্যামপুর গ্রামের গোলাপ বাগানে গোলাপ তোলার সময় আনোয়ার হোসেন নামে এক গোলাপ চাষি এভাবেই কথাগুলো বলেন।
একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা দুর্যোগ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন বিরুলিয়ার গোলাপ চাষিরা। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন পর্যন্ত গোলাপ চাষিদের বিশাল ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে। দুই মাসের বেশি সময় সাধারণ ছুটি চলাকালে করোনা ঝুঁকির আশঙ্কায় ফুল বিক্রি সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। বাগানে গোলাপ ফুটলেও গাছ থেকেই নষ্ট হয়েছে। তবে বর্তমানে ব্যবসা কিছুটা চালু হয়েছে।
সরেজমিনে বিরুলিয়ার শ্যামপুরের গোলাপ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার আশপাশের উত্তরা, মিরপুর, বছিলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা ও স্থলপথে অসংখ্য মানুষ গোলাপ গ্রামে আসছেন। বিশেষ করে ঈদের পরদিন থেকে টানা কয়েক দিন গোলাপপ্রেমীদের আগমন বেশি দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামপুর গ্রামে বাগানের পর বাগানে নানা রঙের গোলাপ ফুটে আছে। গোলাপ বাগান দেখতে আসা পর্যটকরা প্রখর রোদে ঘেমে গেলেও গোলাপ বাগান দেখে সবাই বিমোহিত। কেউ কেউ চাষিদের সঙ্গে দরদাম করে গাছ থেকে নিজের হাতে গোলাপ ফুল কেটে নিচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ায় ফুটন্ত গোলাপ খুব একটা চোখে পড়েনি। বিকেল নাগাদ আধফোটা ফুলগুলো ফুটে যায়। বিকেলেই ফুল তোলা হয়। গোছা গোছা করে বেঁধে প্রস্তুত করা হয় হাটে নেয়ার জন্য।
জানা গেছে, করোনায় কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর বর্তমানে শ্যামপুরে প্রতিদিনই বসে গোলাপের হাট। চাষিরা ফুল কেটে নিয়ে যান হাটে। সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ব্যবসায়ী ভিড় জমান এখানে। রাতে জমতে থাকে বেচাকেনা। ভোর থাকতে থাকতেই সেই ফুল পৌঁছে যাওয়া চাই রাজধানীর শাহবাগসহ সব পাইকারি দোকানে।
এমইউ/এএইচ/পিআর