শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্বীকৃতি চান রাবেয়া খাতুন
স্বাধীনতার অনেক বছর পরও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আখতার খানের স্মৃতি বুকে ধারণ করে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন স্ত্রী রাবেয়া খাতুন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক রাবেয়া খাতুন আর্থিক অনুদান পেলেও আজ পর্যন্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্বামী আখতার খানের নাম উঠেনি। ফলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য পরিচয় থেকে বঞ্চিত হয়ে আছেন স্ত্রী-সন্তানরা।
মাগুরা শহরতলীর পারলা এলাকার বাসিন্দা চার সন্তানের জনক আখতার খান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। মাগুরার মহম্মদপুর এলাকার বীর প্রতীক গোলাম ইয়াকুবের নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিবাহিনীর সাহসী সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন আখতার খান। সহযোদ্ধা মাগুরা শহরের পিটিআই পাড়ার শওকত আলী খান আজও সে স্মৃতি গর্বের সঙ্গে স্মরণ করেন।
গোলাম ইয়াকুব বাহিনীভুক্ত থাকা অবস্থায় স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে বাড়িতে আসেন আখতার খান। এসময় একাত্তরের ৮ শ্রাবণ সকালের দিকে বাজারে গেলে নিজ বাড়ির এলাকার রাজাকার মোকো মল্লিকের ইঙ্গিতে রাজাকার বাহিনী আক্তার খানকে শহরের পুরাতন বাজার থেকে প্রকাশ্য দিবালকে ধরে নিয়ে যায়। এর পরপরই মাগুরা শহরের বিভিন্ন সেনা ও রাজাকার ক্যাম্পে ধর্না দিয়েও আখতার খানের সন্ধান মেলেনি।
পরে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর রাজাকার ক্যাম্পে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন আখতার খান। দুদিন ধরে নির্যাতনের পর রাতের অন্ধকারে মাগুরা শহরের পাশের নবগঙ্গা নদীর ধারে নিয়ে গুলি করে তার মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। স্রোতের টানে চির দিনের জন্য হারিয়ে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতার খান।
আখতার খানের চার সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান আছিয়া খাতুনের বয়স তখন মাত্র সাত বছর। অপর দুই ছেলে ও এক মেয়ে তখনও অবুঝ শিশু। এদের নিয়েই জীবন যুদ্ধে নামেন সদ্য বিধবা রাবেয়া খাতুন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও স্বামীর ব্যবহৃত একটি সানগ্লাস, কিছু চিঠিপত্র কাপড় চোপড় ও বিয়ের সময় স্বামীর দেয়া একটি ট্রাংক আজও স্মৃতি হিসেবে আগলে রেখেছেন রাবেয়া খাতুন।
দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনদের সহায়তায়। দুই ছেলে ইখলাছুর রহমান ও ফয়জুর রহমান কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দুই ছেলের আশ্রয়ে দিন কাটছে রাবেয়া খাতুনের। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে জাতির জনক শেখ মুজিবর রহামান ২ হাজার টাকা এবং ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ হাজার টাকা অনুদান পঠিয়েছিলেন রাবেয়া খাতুনকে। এছাড়া কেউ আর খোঁজ খবর নেননি এ শহীদ পরিবারের।
আখতার খানের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভূক্ত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে আবেদন নিবেদন করা হলেও অজ্ঞাত কারণে আজ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
মো. আরাফাত হোসেন/এমজেড/এমএস