বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় নেই গাবতলী বাস টার্মিনালে
অডিও শুনুন
আর মাত্র দুদিন পর ঈদুল আজহা। প্রতি বছর এই সময় গ্রামের বাড়ি ফিরতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে। এবার চিত্র একেবারেই আলাদা। গাবতলী বাস টার্মিনালে ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় নেই। সকাল থেকে আন্তঃজেলা বাস কাউন্টারগুলোতে টিকিট নিয়ে গলা ফাটিয়ে ডেকেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। বড় পরিবহনগুলোতে অনলাইনে টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে।
বুধবার (২৯ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীদের কোনো ভিড় নেই। প্রতিবারের মতো বসানো হয়নি কোনো নিরাপত্তা ওয়াচ টাওয়ার। ঈদের আর মাত্র দুই বাকি থাকলেও বসেনি কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর বুথ। অন্যান্য বছর ঈদের আগে এ সময় দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এবার কাউন্টারের লোকেরা ডাকাডাকি করেও টিকিট বিক্রি করতে পারছেন না। গাবতলী বাস টার্মিনালে একরকম যাত্রীশূন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সোহাগ কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা সোলায়মান বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কম লোকই ঈদে বাড়ি যাচ্ছে। অন্যান্য ঈদে এ সময়ে প্রতিদিন ২০টি গাড়ি ছাড়লেও সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মাত্র তিনটি গাড়ি ছেড়েছে। টিকিট বিক্রি হলে তবে নতুন করে গাড়ি ছাড়া হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
শৌখিন পরিবহনের কাউন্টারমাস্টার জাকির হোসেন জানান, যাত্রী নেই, আজকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১০টি গাড়ি ছাড়ার কথা থাকলেও বিকেল পর্যন্ত চারটি গাড়ি ছেড়েছে। এমন পরিস্থিতি হলে পরিবহনের কর্মচারীদের বেতন পাওয়ার আশা করা যাবে না।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মানুষের কাছে টাকা নেই। সরকারের নির্ধারণ করা ভাড়া বেশি আদায় করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক সিট খালি রেখে গাড়ি ছাড়তে হচ্ছে। এতে যাত্রী ও পরিবহন মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবারের (৩০ জুলাই) টিকিট কাটতে আজ বুধবার গাবতলী বাস টার্মিনালে আসেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রংপুরের ইমরান হাবিব। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত ঈদে (রোজার ঈদে) বাড়ি যাইনি। এবার মা-বাবা, ভাই-বোনদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাব। সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে দেখি কোনো ভিড় নেই। খুব সহজেই বাসের টিকিট পেয়ে গেলাম। সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় টিকিট কিনেছি।
গাবতলী বাস টার্মিনালের শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার প্রভাত রায় বলেন, এবারের ঈদে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। ঈদে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। যাত্রী কম থাকার কারণে এবার গাড়ির সংখ্যাও কম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সড়কে গাড়ি চালানো খুবই কঠিন। আগের মতো যদি আমরা ৪০টি সিটের টিকিট বিক্রি করতে পারতাম তাহলে মালিকের লাভ হতো, আমরাও ঠিকমতো বেতন-বোনাস পেতাম।
তিনি বলেন, যাত্রী না থাকায় বেশি বাস ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়ায় গাড়ি চালানোতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। ঈদে আমাদের ব্যবসা মূলত ওয়ান সাইডের। ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে যায়। ফেরার সময় খালি বাস আসে ঢাকায়। এভাবেই হয় আমাদের ঈদের ব্যবসা।
ঝিনাইদহ রোডের ডে লাইন পরিবহনের ম্যানেজার আব্দুল লতিফ বলেন, বর্তমানের মতো খারাপ পরিস্থিতি আগে কখনও হয়নি। পরিবহন স্টাফদের না খেয়ে মরে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। ঈদেও গাড়ির টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি গাড়িতে ৩ থেকে ৪ হাজার লোকসান হচ্ছে। আজকে চারটি গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একটি গাড়ি ছেড়েছে। গাড়ির ড্রাইভার ও কর্মচারীরা বেতন ছাড়া অর্ধহারে-অনাহারে দিন পার করছেন।
হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারমাস্টার আফজাল বলেন, গত ঈদের তুলনায় এবার যাত্রী অনেক কম, বাসও কম ছাড়া হচ্ছে। গত কোরবানির ঈদে ডে-নাইট মিলিয়ে গাবতলী থেকে বাস ছেড়েছে ২০টি। কিন্তু এখন ডে-নাইট মিলিয়ে পাঁচ থেকে ছয়টি বাস ছাড়া হচ্ছে। যদি ঈদের আগে যাত্রীদের চাপ বাড়ে তখন ডে-নাইট মিলে আরও কিছু বাস বাড়ানো হতে পারে। আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনলাইন ও কাউন্টারের মাধ্যমে ৩০ ও ৩১ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হয়েছে।
এমএইচএম/এমএসএইচ/এমকেএইচ