মিনিটেই শেষ ট্রেনের টিকিট

জসীম উদ্দীন
জসীম উদ্দীন জসীম উদ্দীন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১০ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২০

অডিও শুনুন

সকাল ৬টায় অ্যাপে মিলবে টিকিট। টিকিটযুদ্ধে নিজের টিকিট বাগিয়ে নিতে ভোরে উঠেই মোবাইলের রেলসেবা অ্যাপ ও ল্যাপটপে ওয়েবপেজ খুলে প্রস্তুত মাসুদ রানা। কিন্তু ৬টা বাজতেই অ্যাপ আর কাজ করছিল না। ল্যাপটপেও শুধু লোডিং দেখায়। এভাবেই মিনিটের কাঁটা না শেষ হতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ‘আপনার কাঙ্ক্ষিত আসন নেই’ (রিকোয়েস্টেড সিট নট অ্যাভেইলেবল)। অর্থাৎ টিকিট শেষ।

লালমনি এক্সপ্রেসের টিকিটপ্রত্যাশী মাসুদ রানা বলেন, রেলের কাউন্টারে অপেক্ষা করলেও বোঝা যেত কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকিট পাওয়া সম্ভব কিনা। কিন্তু এখন সব টিকিট অনলাইনে দিলেও টিকিট প্রত্যাশা করাটা ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমস্যা আরও বেড়েছে ঈদে ট্রেনের সংখ্যা না বাড়ানোয়।

আবার টিকিটপ্রত্যাশী অনেকেরই অভিযোগ, টিকিট কাটতে গিয়ে টাকা বিকাশে কিংবা ক্রেডিট কার্ডে কেটে নিলেও পাননি কাঙ্ক্ষিত টিকিট। কেটে নেয়া টাকা ফেরত পেতেও লাগছে চারদিন থেকে এক সপ্তাহ।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কোরবানির ঈদেও টিকিট কাটার চিত্র ছিল ভিন্ন। কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল উপচেপড়া ভিড়। টিকিটপ্রত্যাশীদের অনেকে রাতেই রেলস্টেশনে লাইন ধরে দাঁড়াতেন। কিন্তু করোনায় বদলে গেছে অনেক কিছুই। করোনাকালে এবারের ঈদে অনেক রুটের ট্রেন বন্ধ। ঢাকা থেকে মাত্র ১৭টি রুটে চলছে ট্রেন। বাকি সবগুলোই বন্ধ। যে কারণে রেলের টিকিটপ্রত্যাশীদের বাড়তি চাপ।

অনলাইন কিংবা অ্যাপে টিকিটপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, টিকিট কাটার নির্ধারিত সময়ে অ্যাপ অচল হয়ে পড়ছে। লোডিং দেখায়, হ্যাং হয়ে থাকে। টার্ন করে না। আবার শেষ মুহূর্তে গিয়ে টাকার জন্য বিকাশ নম্বর চাওয়ার সময় দেখায় টিকিট শেষ।

মো. আল জামি নামে একজন ফেসবুকে Bangladesh Railway Fans' Forum (BRFF) পেজে লিখেছেন, ‘একদম ৬টায় ঢুকেও ১টা টিকিটও পেলাম না, সব জালিয়াতি করে ফেলেছে। আজিব দেশ... লজ্জা লাগে, এমন দেশে আমরা বাস করি। লজ্জা বিডি রেইল...।’

তানজিল খান নামে আরেকজন লেখেন, আজ সকাল ৬টার কিছু আগে বসলাম চিত্রা ট্রেনের ২৯ তারিখের টিকিট কাটার জন্য। অ্যাপ দিয়ে ঢুকলাম কিন্তু হায় এ কী অবস্থা! ফ্রম-টু কোনোটাই আসছে না। অনেকক্ষণ চেষ্টা করলাম হলো না। তারপর অ্যাপ ব্যতীত ব্রাউজার দিয়ে ঢুকে দেখি টিকিট প্রায় শেষের দিকে। ব্রাউজার দিয়েই কাটার চেষ্টা করতে থাকি কিন্তু প্রতি ধাপেই কী অবস্থা সেটা ছবিতেই দিলাম। টানা ৩৫ মিনিট চেষ্টার পর টিকিট পেলাম। কিছুক্ষণ পর অ্যাপ দিয়ে ঢুকে দেখলাম খুব সহজেই সবকিছু ওপেন হলো কিন্তু টিকিট আর একটাও খালি নাই।

ভাগ্যবানদের একজন লিখেছেন, সকাল ৬টায় টিকিট কাটতে পারিনি তো কী হয়েছে, ৬টা ৫২-তে পেরেছি। ৬টার সময় বিকাশ থেকে টাকা পেমেন্ট হচ্ছিল না।

ticket

শাহরিয়ার নয়ন নামে আরেকজন টিকিট কাটতে না পেরে ক্ষোভ উগড়ে দেন ফেসবুকে। তিনি লেখেন, ‘যত ডিজিটাল তত চুরি’। পুরাই ফালতু একটা সিস্টেম, টাকা কেটে নিয়ে টিকিট দেয় না। ২ মিনিটে টিকিট শেষ, গতকালের মতো আজও একই অবস্থা। এখন বিনা টিকিটে রেলভ্রমণ ছাড়া আমার উপাই নেই। রেলসেবার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, CNS নিয়ে চলে, অনলাইন টিকিট বন্ধ করা উচিত, নিজের টাকায় টিকিট কাটব পরের ওপর ভরসা করব কেন? দুদিনে ৭৮০ টাকা গেল, টাকা ফেরত পাব কিনা জানি না, যদি পাই ৮ দিন পর। ডিজিটাল যুগে ২৪ ঘণ্টা নয় কেন? এ দায় কার- Rail sheba, Bkash, CNS... টাকা কেটে নিয়ে দিল ফাঁকা টিকিট….।’

রেল মন্ত্রণালয়ে সদ্য যোগ দেয়া অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেন, ট্রেনে এক ডেস্টিনেশনে, একটি ক্লাসের সব টিকিট বিক্রি হতে এক থেকে দুই সেকেন্ড লাগে। মনে করুন, ২৭ তারিখ ঢাকা-চট্টগ্রামে সুবর্ণের এসি স্নিগ্ধা সিট আছে ৫০০। এই ৫০০ টিকিট শেষ হতে মাত্র এক সেকেন্ড সময় লাগবে। ২য় সেকেন্ডে আর টিকিট পাবেন না। এবার বুঝুন, সিট কম, চাপ বেশি। কয় সেকেন্ড লাগবে সব টিকিট শেষ হতে। সো, কাল সকাল ৬টা থেকে আসল যুদ্ধ শুরু। নিশ্চিত থাকুন, রেল বা সিএনএসবিডি থেকে কোনো সমস্যা বা ম্যানুপুলেশনের সুযোগ নেই। যদি কোনো গেটওয়ের সমস্যা না হয়। ঈদে একটি ট্রেনের টিকিট শেষ হতে পাঁচ সেকেন্ড লাগার কথা নয়।’

ঢাকায় রেলসেবা অ্যাপের জরুরি নম্বরে যোগাযোগ করা হলে টেকনিক্যাল সাপোর্ট শাখার বরাতে জানানো হয়, টিকিট যতক্ষণ অ্যাভেইলেবল ততক্ষণ মিলছে। তবে সমস্যা হচ্ছে ট্রেনের সংখ্যা কম। যে রুটে ট্রেনের সংখ্যা ছিল ৫টা সেখানে ট্রেন এখন একটা। করোনার সুরক্ষানীতির কারণে সিটও হয়ে গেছে অর্ধেক। একটা ট্রেনে সিট সে হিসেবে মাত্র ৩০০।

টেকনিক্যাল সাপোর্ট শাখা আরও জানায়, একটি টিকিটের বিপরীতে ৩৮০ জন একসঙ্গে হিট করেছে সাইটে। অ্যাপে এ সংখ্যা আরও বেশি। যে কারণে অনেক ক্ষেত্রেই বিকল হয়ে পড়ছে রেলসেবার অ্যাপ। এ সমস্যা ঈদে বাড়টি টিকিটের চাপের কারণে হচ্ছে। বাড়তি টিকিটের চাপ থাকলেও ট্রেনের শিডিউল কম।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে ঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে সরকারি নির্দেশে গত ৩১ মে থেকে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে বিভিন্ন রুটে ১৭টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। সাধারণ ছুটি থাকাকালীন মালবাহী ট্রেন চলাচল অব্যাহত ছিল।

বাংলাদেশ রেলওয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ আগস্ট ঈদুল আজহা উপলক্ষে বর্তমানে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনসমূহ পরিচালনা অব্যাহত থাকবে। ঈদের দিন এবং ঈদের পরদিন সব আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী ৩১ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত সব ধরনের মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।

জেইউ/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।