আজ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী


প্রকাশিত: ০২:৩৫ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী আজ বুধবার (২৮ অক্টোবর)।১৯৭১ সনের এ দিনে সম্মুখযুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে পাক-হানাদার বাহিনীর বুলেটে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই চা-বাগানের ভারতীয় সীমান্ত এলাকার হামিদুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন  যশোর জেলার (বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলা) মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্বাস আলী মণ্ডল এবং মায়ের নাম মোসাম্মাৎ কায়সুন্নেসা।

১৯৭০ সালে হামিদুর রহমান যোগ দেন সেনাবাহিনীতে সিপাহী পদে৷ তার প্রথম ও শেষ ইউনিট ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট৷ সেনাবাহিনীতে ভর্তির পরই প্রশিক্ষণের জন্য তাকে পাঠানো হয় চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে৷ ২৫ মার্চের রাতে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ওখানকার আরো কয়েকটি ইউনিটের সমন্বয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে হামিদুর রহমান ১ম ইস্টবেঙ্গলের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন। ভোর ৪টায় মুক্তিবাহিনী লক্ষ্যস্থলের কাছে পৌঁছে অবস্থান নেয়। সামনে দু প্লাটুন ও পেছনে এক প্লাটুন সৈন্য অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে শত্রু অভিমুখে। শত্রু অবস্থানের কাছাকাছি এলে একটি মাইন বিস্ফোরিত হয়। মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ফাঁড়ির খুব কাছে পৌঁছে গেলেও ফাঁড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত হতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিবর্ষণের জন্য আর অগ্রসর হতে পারছিলো না।

অক্টোবরের ২৮ তারিখে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাঁধে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয়। মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রেনেড ছোড়ার দায়িত্ব দেয়া হয় হামিদুর রহমানকে। তিনি পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুটি গ্রেনেড সফলভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। সে অবস্থাতেই তিনি মেশিনগান পোস্টে গিয়ে সেখানকার দুই জন পাকিস্তানি সৈন্যের সঙ্গে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু করেন।

এভাবে আক্রণের মাধ্যমে হামিদুর রহমান এক সময় মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন। এই সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল উদ্যমে এগিয়ে যান, এবং শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন।কিন্তু হামিদুর রহমান বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেননি, ফাঁড়ি দখলের পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হামিদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে। হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয় ভূখন্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। নীচু স্থানে অবস্থিত কবরটি এক সময় পানির তলায় তলিয়ে যায়।

২০০৭ সালের ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করে, এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে শহীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১১ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।