মৌসুমে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় বন্যা, আরও অবনতির মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩১ পিএম, ২১ জুলাই ২০২০

অডিও শুনুন

মাস হতে চলল চলমান বন্যার। কমছে তো নাই-ই বরং বন্যার ব্যাপকতা আরও বাড়ছে। দেশে বর্তমানে বন্যার যে পরিস্থিতি, তা চলতি মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে বন্যায় আক্রান্ত ১৬ জেলা। বিপৎসীমার উপরে ১৭টি নদীর পানি। নদীগুলোর ২৮টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমা অতিক্রম করায় পানিতে ডুবে গেছে ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ভেঙে গেছে বাঁধ। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। গবাদিপশু, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, থাকা-খাওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে বন্যা আক্রান্তরা।

অন্যদিকে গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এই বৃষ্টি আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে মৌসুমের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় এখন বন্যা থাকলেও এটি আরও বিরূপ আকার ধারণ করতে পারে। তাছাড়া উজানের ঢল, অর্থাৎ ভারতীয় অংশের পানিতে দ্রুতই এই পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।

মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এমনটাই জানিয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক আবহাওয়ার মডেলের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। তবে আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। ফলে এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও তিস্তা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজান মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদী এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অববাহিকার নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নাটোর, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অপরদিকে সিলেট এবং সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। ঢাকা জেলার আশপাশে নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এখন বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে। সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ছাতকে ১৮০, দেওয়ানগঞ্জে ১৫০, মহেশখোলায় ১৪১, কক্সবাজারে ১০১, লরেরগড়ে ১৪০, জাফলংয়ে ১৩৬, সুনামগঞ্জে ১২০, নোয়াখালীতে ৭৪, লালাখালে ১১৬, পঞ্চগড়ে ১১৪, দুর্গাপুরে ১১২ এবং পরশুরামে ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৩৯০, শিলংয়ে ১৪৩ এবং পাসিঘাটে ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম অংশে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, তিস্তার ডালিয়া অংশে ২০, ঘাঘটের গাইবান্ধা অংশে ৪৩, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া অংশে ২৬, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী অংশে ৪২, যমুনার ফুলছড়ি অংশে ৭২, যমুনার বাহাদুরাবাদ অংশে ৭৮, যমুনার সারিয়াকান্দি অংশে ৮৮, যমুনার কাজিপুর অংশে ৭৪, যমুনার সিরাজগঞ্জ অংশে ৬৯, যমুনার আরিচা অংশে ৬৮, গুড়ের সিংড়া অংশে ৬৭, আত্রাইয়ের বাঘাবাড়ি অংশে ১০০, ধলেশ্বরীর এলাসিন অংশে ১০৮, পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের জামালপুর অংশে ৪, শীতলক্ষ্যার নারায়ণগঞ্জ অংশে ৭, কালিগঙ্গার তারাঘাট অংশে ৮৭, ধলেশ্বরীর জাগির অংশে ৪৮, পদ্মার গোয়ালন্দ অংশে ১০৫, পদ্মার ভাগ্যকুল অংশে ৭২, পদ্মার মাওয়া অংশে ৬৬, পদ্মার সুরেশ্বর অংশে ১৯, সুরমার কানাইঘাট অংশে ৭৫, সুরমার সুনামগঞ্জ অংশে ২৫, সারিগোয়াইনের সারিঘাট অংশে ৪৫, পুরাতন সুরমার দিরাই অংশে ১৪, যদুকাটার লরেরগড় অংশে ১ এবং মেঘনার চাঁদপুর অংশে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ২০০৪ সালের পর দেশে এত দীর্ঘসময় ধরে আর কখনও বন্যা ছিল না। অর্থাৎ গত ১৬ বছরে এমন বন্যার কবলে পড়েনি বাংলাদেশ

পিডি/বিএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।