করোনায় ল্যাপটপ-ট্যাব-স্মার্টফোনের বিক্রি বেড়েছে, দামও বাড়তি
অডিও শুনুন
করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মিটিং হচ্ছে অনলাইনে। অফিসিয়াল অনেক কার্যক্রমও চলছে অনলাইনে। অন্যদিকে করোনায় অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। সময় কাটাতে অনেকে দীর্ঘসময় পার করছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজন স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার। ফলে করোনার এই সময়ে অনেক পণ্যের চাহিদা কমে গেলেও বেড়েছে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং ট্যাবের চাহিদা। সেই সঙ্গে বেড়েছে এসবের দামও। স্মার্টফোন ও ট্যাবের দাম বেড়েছে গড়ে ২ হাজার টাকা। ল্যাপটপপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা।
সোমবার (২০ জুলাই) রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। দাম বাড়ার বিষয়ে দোকানিদের কেউ বলছেন, আমদানি একেবারেই বন্ধ। কেউ বলছেন, সীমিত আকারে আমদানি আছে। তবে শুল্কসহ অন্যান্য খরচ বাড়তি থাকায় দাম বেড়েছে। আবার কোনো কোনো দোকানি বলছেন, ভিভো ও অপ্পোর কারখানা বাংলাদেশে রয়েছে। তারা নতুন নতুন মডেল বাজারে ছাড়ছে। তবে সেসব পণ্যেরও দাম বাড়তি।
এই শপিং কমপ্লেক্সের ইনোভেশন অ্যালার্ট দোকানের কর্ণধার মো. পলাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগের চেয়ে করোনার সময় এসে ল্যাপটপ ও ট্যাবের বিক্রি বেড়েছে। বলা যেতে পারে, ল্যাপটপের বিক্রি বেড়েছে ১০ শতাংশ এবং ট্যাবের ৫ শতাংশ। পাশাপাশি ল্যাপটপ ও ট্যাবের দামও বেড়েছে। ল্যাপটপপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার টাকা এবং ট্যাবপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২ হাজার টাকা। করোনার কারণে আমদানি না থাকায় এই দাম বেড়েছে। অবশ্য সীমিত আকারে কিছু আমদানি আছে। সীমিত আমদানি থাকলেও শুল্কসহ অন্যান্য খরচ বেশি পড়ছে। তাই এই বাড়তি দাম।’
মো. পলাশ আরও বলেন, ‘দাম বাড়তি থাকলেও অনেককে আমরা তাদের চাহিদা মতো পণ্য দিতে পারছি না। তারা যে মডেল খুঁজতে আসে, অনেক ক্ষেত্রে সেসব মডেল না থাকায় তারা ফিরে যাচ্ছেন। এটা এখন বেশি ঘটছে।’
আমদানি না থাকা কিংবা খুব সীমিত থাকায় চাহিদা অনুযায়ী স্মার্টফোন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের আরএসকে মোবাইল মেলা স্টলের কর্মচারী মো. রাকিব। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্মার্টফোনের চাহিদাও আগের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু করোনার কারণে মোবাইল আমদানি বন্ধ থাকায় গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী মোবাইল দিতে পারছি না।’
রাকিব আরও বলেন, ‘আমদানি বন্ধ থাকায় মোবাইলের দামও বেড়েছে। প্রতিটি মোবাইলে প্রায় ২ হাজার টাকা করে দাম বেড়েছে।’ স্মার্টফোনের দাম বাড়ার কথা জানান এই শপিং কমপ্লেক্সের নূর জাহান ইন্টারন্যাশনাল স্টলের সাব্বির মাহমুদও। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে মোবাইলের দাম বেড়ে গেছে। যেটার দাম ১৫ হাজার ছিল, সেটার দাম ১৭ হাজার টাকা হয়েছে।’
এই শপিং কমপ্লেক্সের আরেক মোবাইল দোকানি শাহরিয়ার জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবগুলো পণ্যেরই দাম একটু বেশি। তবে নিত্যনতুন মডেল বাজারে আসছে, নতুন নতুন পণ্য ঢুকছে। নতুন পণ্য কিছু আসছে। যেমন ভিভোর কিছু মডেল সম্প্রতি রিলিজ হয়েছে। অপ্পো ও ভিভোর পণ্য মেড ইন বাংলাদেশ। ওদের কারখানা বাংলাদেশে হওয়ায় নতুন মডেল রিলিজ হওয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারণ এর উৎপাদন বাংলাদেশেই হচ্ছে।’
শাহরিয়ার আরও বলেন, ‘করোনার আগেও মোবাইলের চাহিদা বাজারে ছিল। বর্তমানে মানুষ কোয়ারেন্টাইনে থাকায় মোবাইলের প্রতি আসক্তি বেড়ে গেছে। যে কারণে মোবাইলের বিক্রি আমাদের তুলনামূলক বাড়ছে। কিন্তু প্রত্যেকটা পণ্য কম আসার কারণে সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। অন্য পণ্যের তুলনায় মোবাইলের কথা যদি চিন্তা করেন, বিক্রি একটু বাড়ছে।’
দাম বাড়তি থাকায় অনেকের পক্ষে তাদের পছন্দের পণ্য কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এমন একজন সিয়াম। তিনি বলেন, ‘শাওমির একটি মডেল আমার পছন্দ ছিল। সেই অনুযায়ী টাকাও নিয়ে এসেছি। এসে দেখি সেটার দাম বেড়ে গেছে। এখন সেটা আমার পক্ষে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এখন ওই টাকা দিয়ে আমাকে সেই তুলনায় নিম্নমানের মোবাইল কিনতে হবে।’
তারপরও অনেকে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামেই এসব পণ্য কিনছেন। তাদের একজন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শওকত জামান মোহন। তার মেয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তার মেয়ে পড়ে ময়মনসিংহ বিদ্যাময়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন। শওকত জামান মোহন জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার কারণে কলেজে ক্লাস বন্ধ হওয়ার পর বাড়িতেই পড়ছিল মেয়ে। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন চান্স পায়, তাই তাকে রাজধানীর ফার্মগেটের একটি কোচিংয়ে ভর্তি করেছিলাম। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে সেখানে কোচিংয়ে ক্লাস করার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা কবে হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ইতোমধ্যে কোচিং সেন্টারে অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে। তাই আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবন থেকে একটি ল্যাপটপ ৮৩ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। সাথে গ্রামীণ সেন্টার থেকে জিপির একটি মডেমও কিনেছি। করোনা না হলে হয়তো এইচএসসি পরীক্ষার পরে ঢাকায় এসে সরাসরি কোচিংয়ে ক্লাস করতে পারত। এখন তো আর তা হচ্ছে না, তাই ল্যাপটপ কিনতে হলো।’
পিডি/এমএফ/এমকেএইচ