ট্রাক ভর্তি এক টন পিরানহা ফেলে পালালেন মালিক-চালক
চট্টগ্রাম নগরের ফিশারিঘাটে মাছের আড়তে অভিযান চালিয়ে বিক্রয় নিষিদ্ধ প্রায় এক টন পিরানহা মাছ জব্দের পর তা ধ্বংস করেছেন জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেই সঙ্গে এক আড়তদারকে পিরানহা মাছ বিক্রি ও সংরক্ষণের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জব্দ ও জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক। অংশ নেন জেলা মৎস্য দফতরের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল আমীন, আবুল কালাম আজাদ, কামাল উদ্দিন, কোস্টগার্ডের পতেঙ্গা পূর্ব জোনের সিপিও শফিউল্লাহ ও সিএমপি পুলিশ সদস্যরা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় জেলার গুরুত্বপূর্ণ মাছের বাজার ও আড়তে নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ ও আফ্রিকান মাগুর বিক্রয়ের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আজ ভোরে নগরের ফিশারিঘাটে অভিযানে চালিয়ে মমিন সওদাগরের মাছের আড়ত ও ট্রাকভর্তি এক টন বিক্রয়নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফিসারীঘাটের মাছের আড়তগুলোতে নিষিদ্ধ পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছ বিক্রয় ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন। একপর্যায়ে মমিন সওদাগরের আড়তে পিরানহা মাছের সন্ধান মিলে। সেখানে বিক্রয়ের জন্য সংরক্ষিত প্রায় ২০০ কেজি পিরানহা মাছ জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং তাকে নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ বিক্রি ও সংরক্ষণের দায়ে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সময়ে ওই এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের খবর পেয়ে ট্রাক ভর্তি প্রায় এক টন নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ ফেলে মালিক ও চালক পালিয়ে যান। পরে মাছগুলো জব্দ করে তা জনসম্মুখে ধ্বংস করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মমিন সওদাগরের মাছের আড়তের বিক্রয় রেজিস্ট্রার খাতা যাচাই করে দেখা যায়, তিনি পিরানহা মাছ না লিখে রূপচাঁদা মাছের নাম লিখে রেখেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে বিক্রয়কর্মী বলেন, ফিসারীঘাটে পিরানহা মাছকে রূপচাঁন্দা বা চাঁদা মাছ বলে। পিরানহা মাছ দেশের বিভিন্ন জেলা যেমন- সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, এমনকি ভারত থেকে চট্টগ্রামের ফিসারীঘাটের আড়তে আসে। অনেকেই জানেন না অনেকটা রূপচাঁদা মাছের মতো দেখতে এই মাছের নাম পিরানহা। যার ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা অনায়াসে মানুষ ঠকাচ্ছে হরহামেশা।’
‘পিরানহা মাছটি রাক্ষুসে স্বভাবের। এদের ছোট চোয়াল হলেও ত্রিভুজাকৃতির ক্ষুরের মতো ধারালো দুইপাটি দাঁত আছে। অন্য প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণীদের খেয়ে ফেলে খুব সহজে। দেশীয় প্রজাতির মাছ তথা জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ এই পিরানহা মাছ। দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন ও মৎস্য জীববৈচিত্রের জন্য ভয়ানক হুমকি এই পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর মাছের পোনা উৎপাদন, চাষ,বাজারজাতকরণ, পরিবহন ও মজুত নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে যারা এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্ষতিকর ও রাক্ষুসে পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুরের চাষ ও ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ে হবে’,- বলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
জেডএ/এমকেএইচ