যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের জানাজা সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০৮ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২০

দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বেলা পৌনে ২টায় রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক মসজিদ প্রাঙ্গণে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী, গুণগ্রাহীসহ অসংখ্য মানুষ অংশ নেন। তবে করোনার কারণে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে জানাজা সম্পন্ন করতে হয়েছে। দাতব্য সংস্থা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে নুরুল ইসলাম বাবুলকে গোসল করানো হয়।

বনানী কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার মরদেহ দাফন করা হবে। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় দাফনের সময় পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ থাকবে না।

জানাজার আগে মরহুমের জন্য দোয়া কামনা করেন তার ছেলে যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম। তিনি তার বাবার পক্ষ থেকে সবার কাছে ক্ষমা চান। পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনে তার কাছে ব্যবসায়িক ও নিজস্ব কোনো দেনা-পাওনা থাকলে তাও পরিশোধ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

শামীম ইসলাম বলেন, ‘আমরা যেখানে জানাজার জন্য দাঁড়িয়ে আছি এটা আমার বাবার নিজ হাতে করা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ ৪৫ বছরে তিল তিল করে তি‌নি আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। দেশকে এগিয়ে নিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও তিনি ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন।’

তিনি বলেন, উনি আজ যে অবস্থানে এসেছেন এটি সহজ পথ ছিল না। অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা পার করে তিনি এই পর্যায়ে এসেছেন। তার চলার পথে আপনারা অনেকে আঘাত পেতে পারেন। অনেকে ভুল বুঝতে পারেন। আমি ছেলে হিসেবে আমার বাবার পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আশা করছি আপনারা সবাই আমার বাবাকে ক্ষমা করে দেবেন।

যমুনা গ্রুপের কর্মীদের উদ্দেশে শামীম ইসলাম বলেন, এখানে যারা কাজ করছেন তারা কেউ মনোবল ভাঙবেন না। আমরা একটি পরিবার, আপনারা এতদিন একসঙ্গে ছিলেন। আশা করছি আগামীতে আমরা একসঙ্গে থাকব, সামনে এগিয়ে যাব।

সোমবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুরুল ইসলাম বাবুল

গত ১৪ জুন নুরুল ইসলাম বাবুলের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। ওইদিনই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনায় তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশিষ্ট এই শিল্পোদোক্তার চিকিৎসায় এভারকেয়ারের চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহবুদের নেতৃত্ব ১০ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। এর বাইরে চীনের চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ড এলিজাবেথ হাসপাতালের দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছেন।

তার স্ত্রী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান জাতীয় সংসদের সদস্য সালমা ইসলাম। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তার তিন মেয়ে- রোজালিন ইসলাম, মনিকা ইসলাম এবং সনিয়া ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।

যমুনা গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ। ১৯৭৪ সালে নুরুল ইসলাম বাবুল যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প ও সেবাখাতে গড়ে তোলেন ৪১টি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছে এই যমুনা গ্রুপে।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, যমুনা নির্মাণাধীন মেরিয়টস হোটেলসহ শিল্প ও সেবাখাতে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে গ্রুপটি। ইলেকট্রনিক্স, বস্ত্র, ওভেন গার্মেন্টস, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, বেভারেজ টয়লেট্রিজ, নির্মাণ এবং আবাসন খাতে ব্যবসায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই গ্রুপ।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে নুরুল ইসলাম বাবুল একজন আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা। দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। সর্বশেষ করোনার চিকিৎসায় কুড়িলে ৩০০ ফিটের কাছে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে এর প্রাথমিক আলোচনাও শেষ করেছিলেন।

করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকার অনুদানও দিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া করোনা মোকাবিলায় সহজ ও সুলভমূল্যে যমুনা তৈরি করছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। গুণগত মানের দিক থেকে যমুনা গ্রুপ স্বাস্থ্যসম্মত পিপিই তৈরি করছে।

এসআই/বিএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।