ভিয়েতনাম থেকে ফিরতে চান পাচারের শিকার শতাধিক বাংলাদেশি
মাত্র ২৭ জন নয় ভিয়েতনাম থেকে দেশে ফিরতে চান পাচারের শিকার হওয়া শতাধিক বাংলাদেশি। আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী পাঠানোর সুযোগ না থাকলেও রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণার শিকার হয়ে এসব কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে দেশটিতে যান। পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সম্প্রতি ২৭ বাংলাদেশি দূতাবাসে গিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টির পর থেকে ভিয়েতনামে মানবপাচারের বিষয়টি সামনে আসতে থাকে। তবে এর আগে থেকেই সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস বারবার ঢাকাকে সতর্ক করে আসছিলো ভিয়েতনামে বাংলাদেশি কর্মী পাচারের বিষয়ে।
এর আগে দূতাবাসের সহায়তায় ভিয়েতনামের একটি বিশেষ বিমানে ১১ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরানো হয়। তবে ওই ২৭ বাংলাদেশিকে ফেরানো যায়নি। এদিকে গতকাল সোমবার আরও ছয়জন বাংলাদেশি ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি থেকে পালিয়ে এসে দূতাবাসের সামনে অবস্থান নেয়।
বাংলাদেশ দূতাবাস ভিয়েতনাম সরকারের সহায়তায় তাদেরকে আপাতত একটি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র। দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে লেখা চিঠিতে এসব কথা জানিয়েছে।
জানা যায়, আরও ১৩ জন এবং ১৪ জনের একটি দলও দূতাবাসে ফোন করে জানিয়েছেন তারা যেখানে ছিলেন সেখান থেকে পালিয়ে এসেছেন। কারণ লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি তাদেরকে আনলেও ভিয়েতনামে কাজ করার সুযোগ নেই।
পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভিয়েতনামে বিদেশি কর্মীদের কাজ করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে কর্মী নেয়ার বিষয়ে তাদের কোনো চুক্তিও নেই। অথচ ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমিইটি) থেকে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করে তাদেরকে ভিয়েতনামে পাঠিয়েছে।
ভুক্তভোগী এক কর্মী জাগো নিউজকে বলেন, সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ করে ভিয়েতনামে পাঠানো হয়। কোম্পানিতে ৪০০-৫০০ মার্কিন ডলার বেতনের কথাও বলা হয়। কিন্তু যাওয়ার পরে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। যেসব কোম্পানির নামে নেয়া হয় সেসব নামে কোনো কোম্পানি দেশটিতে নেই। বিভিন্ন কোম্পানিতে দৈনিক ভিত্তিতে কিছু কাজ দেয়া হলেও নামমাত্র পারিশ্রমিক দেয়া হত। করোনাকালে সেসব কাজও নেই। ফলে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা।
এই মানবপাচারের সঙ্গে ভিয়েতনামে বসবাসকারী কিছু বাংলাদেশি জড়িত যারা দেশটির নাগরিক বিয়ে করে সেখানে স্থায়ী হয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুরোধে এসব দালালদের ধরতে তৎপর হয়েছেন ভিয়েতনাম পুলিশ। এতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দালালরা। সেই সুযোগে বিভিন্ন স্থানে আটকেপড়া বাংলাদেশিরা পালিয়ে দূতাবাসের কাছে আশ্রয় নিতে আসছেন। তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য দূতাবাসের দারস্থ হচ্ছেন পাচারের শিকার বাংলাদেশিরা।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে তাদের ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ২৭ জন বাংলাদেশির একটি দলকে ফেরত আনার জন্য সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা ফেরত না আনলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দেশটিতে পাচারের শিকার হয়ে ফিরতে ইচ্ছুক অন্যান্যদেরও একইভাবে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আনা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটাও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
মন্ত্রী বলেন, এসব কর্মীরা পর্যটন ভিসায় দেশটিতে গিয়েছিলেন। বিদেশ যাওয়ার আগে তাদেরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।
তবে পর্যটন ভিসায় কীভাবে তারা বিএমইটির স্মার্টকার্ড নিয়ে গেছেন সে বিষয়ে জানতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানান ইমরান আহমদ। তিনি বলেন, বিষয়টি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।
জেপি/এমএফ/পিআর