গণমাধ্যম সামলানোর যোগ্য মুখপাত্রের অভাববোধ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১২:০৬ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২০

অডিও শুনুন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সংবাদকর্মীদের সামলানোর মতো যোগ্য মুখপাত্র বা মিডিয়া উইংয়ের অভাববোধ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনাভাইরাসের বিষয়ে অধিদফতর প্রতিদিন ভার্চুয়ালি স্বাস্থ্য বুলেটিনের আয়োজন করলেও এর বাইরে চিকিৎসাসেবা ঘিরে নানা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের প্রয়োজন পড়ে সংবাদকর্মীদের, যার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও অধিকাংশ সময় তারা গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের তীর্যক প্রশ্ন ও তথ্য-উপাত্তের জবাব দিতে অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসার কথা থাকলেও তারা মুখোমুখি হতে চান না। বরং অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কর্মকর্তাদের মিডিয়ার সামনে কথা বলতে বলে দায় সেরে যান। এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য মিডিয়া উইং থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম সামলাতে যোগ্য মুখপাত্র অর্থাৎ শক্তিশালী মিডিয়া উইংয়ের চরম অভাববোধ করছে অধিদফতর।

কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর চার মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তারপরও তাদের কষ্টের কথা গণমাধ্যমে সঠিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। শক্তিশালী মিডিয়া উইং থাকলে তাদের মাধ্যমে ইতিবাচক উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ পেলে অধিদফতরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো।

পরিচালক পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নতুন এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নমুনা পরীক্ষার জন্য কিট সংগ্রহের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি প্রস্তুত করা, করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপন, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রস্তুত করা, চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ ইত্যাদি সামলাতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তাদের। কিন্তু এসব পরিশ্রমের কথা গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্য শক্তিশালী মিডিয়া উইং না থাকায় নেতিবাচক দিকই অতিমাত্রায় উঠে আসছে।

গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, করোনা মহামারি শুরুর কয়েকদিন পর থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সরাসরি প্রেস বিফ্রিং বন্ধ রয়েছে। ফলে তারা অনেক প্রশ্নের জবাব স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছে চাইলেও অধিকাংশ সময় দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান কিংবা নানা কৌশলে এড়িয়ে যান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার আপাতত একাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমকে সামাল দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সংবাদকর্মীদের কাছে ডা. আয়েশার পরিচিতি গণমাধ্যম-সহায়ক হিসেবে থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক সময় তার কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বা অনেক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তথ্য মেলে না, যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনিই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সরাসরি মুখ না খুললেও সবাই শক্তিশালী মিডিয়া উইংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, স্বাস্থ্য সেক্টরের ব্যাপক কর্মযজ্ঞে হাজার হাজার চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত। তাদের কারও কারও অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দায় সকলের ওপর বর্তাচ্ছে। এ নিয়ে তাদের মনে কষ্ট রয়েছে।

এমইউ/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।