কবর থেকে শিশুর লাশ তুলে ফেলা ন্যক্কারজনক : আর্টিকেল নাইনটিন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক নবজাতক শিশুর লাশ কবর থেকে তুলে রাস্তায় ফেলে দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন।
এ ঘটনাকে বাংলাদেশে ঘৃণাপ্রসূত ধর্মীয় বিদ্বেষ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ন্যক্কারজনক বিরল নজির বলেছে আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থা। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
আর্টিকেল নাইনটিন বলেছে, ভিন্নমত ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা ও দমন-পীড়নের যে সংস্কৃতি দেশে চলমান, কবর থেকে তিন দিনের শিশুর লাশ তুলে রাস্তায় ফেলে দেয়া সেটির চূড়ান্ত ও নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, কেবল ভিন্ন মতাবলম্বী পরিবারে জন্মগ্রহণ করার ‘অপরাধে’, উগ্রবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক এক নবজাতকের লাশকে ‘শাস্তি’ দেয়া এবং এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের নতজানু ভূমিকা- উভয়ই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিপরীত প্রবণতা।
এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন জেলায় হামলা ও সামাজিক নিগ্রহের শিকার হয়ে আসছে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। কেবল ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়ায় তাদের উপাসনালয় ও বাড়িঘর পর্যন্ত আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে রাষ্ট্র কারও সাথে বৈষম্য করবে না।’
‘আবার সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকারও দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভূমিকা নিলে ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত এসব হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটত না,’- বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় একটি হাসপাতালে গত ৭ জুলাই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। নির্ধারিত সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়ায় নানা জটিলতার কারণে গত ৯ জুলাই শিশুটি মারা যায়। ওইদিনই শিশুটির পরিবার সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের ঘাটুরা গ্রামের সরকারি কবরস্থানে লাশ দাফন করে। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোক ওই কবরস্থানে আহমদিয়াদের কাউকে দাফন করা যাবে না জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করে লোক জমায়েত করে। পরে ওই নবজাতকের মরদেহ কবর থেকে তুলে কবরস্থানের বাইরের সড়কে ফেলে রাখে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসা পুলিশ লাশ তোলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে আহমদিয়াদের জন্য নির্দিষ্ট কবরস্থানে শিশুর লাশ পুনরায় দাফনের ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় ১১ জুলাই পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট থানায় কেউ কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেনি।
এ প্রসঙ্গে ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও ধর্মীয় বিশ্বাস প্রসূত ঘৃণা, বিদ্বেষ ও সহিংসতা মোকাবিলায় ২০১১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে (১৬/১৮) ও সাধারণ অধিবেশনে (৬৬/১৬৭) দুটি রেজ্যুলেশন সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আন্তর্জাতিক পরিসরে দেয়া এই প্রতিশ্রুতি পালনের নৈতিক বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের রয়েছে।’
‘কাজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন এ ঘটনায় স্বপ্রণোদিত ব্যবস্থা গ্রহণের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। কবর থেকে শিশুর লাশ তুলে ফেলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও অবাধে তাদের মতো তথা ধর্ম পালনের অধিকার সুনিশ্চিত করতে আর্টিকেল নাইনটিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে,’- বলেন তিনি।
জেপি/জেডএ/এমএস