ইতালি গিয়ে আইসোলেশন মানেননি বাংলাদেশিরা : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ইতালিতে গিয়ে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরও কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি নিয়ম না মেনে দেশটির সরকারি ব্যবস্থাপনার আইসোলেশন থেকে বের হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শনিবার (১১ জুলাই) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে যাওয়ার পর করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া প্রায় ১০০ বাংলাদেশির সহায়তায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে দেশটির সরকার।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাদের অধিকাংশকে ইতালির সরকারি খরচে হোটেলে আইসোলেশনে রাখাসহ প্রয়োজন অনুসারে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশিদের কয়েকজন ইতালি সরকারের সিদ্ধান্ত এবং কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন নির্দেশনা অমান্য করেন। তারা ইতালির সরকারের বিধিনিষেধ অমান্য করায় সে দেশে বসবাসরত মানুষদের করোনা সংক্রমণের আরও ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গত মার্চ মাসে ইতালি থেকে দেশে ফিরে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিরা একই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করেন এবং বাংলাদেশে কোয়ারেন্টাইন নির্দেশনা অমান্য করেন, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুরোপুরি করোনামুক্ত না হওয়ার পরও বাংলাদেশিদের ইতালির রেসিডেন্স পারমিট দিয়ে সে দেশের সরকার অত্যন্ত উদারতার পরিচয় দিয়েছে। গত এক মাসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রায় এক হাজার ৬০০ যাত্রী নিয়ে ইতালিতে ৬টি বিশেষ চাটার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। ইতালিগামী বাংলাদেশি যাত্রীদের অধিকাংশ ইতালির রেসিডেন্স পারমিটধারী এবং কিছু যাত্রী ইতালির পাসপোর্টধারী। বাংলাদেশিদের ইতালির রেসিডেন্স পারমিটপ্রাপ্তি ও সে দেশে গমনের ক্ষেত্রে ঢাকার ইতালির দূতাবাসের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
কিন্তু রোম বিমানবন্দরে গমনের পর সেখানে পরীক্ষায় ৭০-৭৫ জন বাংলাদেশির করোনা পজিটিভ আসে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এছাড়া ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনা পরীক্ষায়ও সে দেশে ২০-২৫ জন বাংলাদেশির করোনা পজিটিভ আসে। ইতালির সংবাদপত্রে ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের করোনা বিষয়ক অবাধ্য আচরণ স্থান পেয়েছে। ফলে ইতালির নাগরিকদের মাঝে সে দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রতি অবিশ্বাস ও অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। সে দেশের একটি পত্রিকায় ‘বাংলাদেশি ভাইরাস বোমা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কিন্তু ইতালির প্রধানমন্ত্রী স্পেনের টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি ‘ভাইরাস বোমা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর প্রভাব পড়ে সেরকম কোনো ধরনের সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ধরনের সংবাদ পরিবেশনে সংবাদের সত্যতা যাচাই করা উচিত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি স্পেন সফরকালে স্পেনের টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইতালির প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ থেকে একটি বিমান ইতালির রোম বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর টেস্টে ২০ শতাংশ যাত্রীর করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে।
এটাকে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়, ইতালিতে করোনাভাইরাস যেন আবার ভয়াবহ অবস্থায় না পৌঁছায় সেজন্য বাংলাদেশের বিমান বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর ১২টি দেশের বিমান সে দেশে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। বিদেশে গমনকারী বাংলাদেশিসহ পৃথিবীর সকল দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন বসবাসরত দেশের আইন ও নিয়ম মেনে চলেন সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যও বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সব ফ্লাইট ও যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইতালি। এর ফলে শুধু বাংলাদেশি নন, কোনো বিদেশি নাগরিকও বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে ঢুকতে পারবেন না।
জেপি/এফআর