‘পেটটা বাঁইচ্চা আছে’
করোনার দাপট এখনো রয়েছে। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ধীরে ধীরে সচল হচ্ছে রাজধানী। ঘুরছে গণপরিবহনের চাকা। তবে বাসের সেই রমরমা যাত্রী নেই। এজন্য যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। অন্যদিকে যাত্রী কম থাকায় তেলসহ বাসের যাবতীয় খরচ শেষে যা থাকে, তা দিয়ে চালক, হেলপার ও মালিকেরও তেমন কিছু থাকছে না। ফলে যানবাহন চলাচল করলেও যাত্রী, চালক, হেলপার ও মালিক-সবাই ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে গাড়ির চালক ও হেলপারদের অভাব-অনটন কাটছে না।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কথা হয় ট্রাস্ট পরিবহনের একটি গাড়ির চালক মো. নূর মিয়ার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেদিন থেকে লকডাউন তুলেছে, সেদিন থেকে গাড়ি চালাচ্ছি। যাত্রীর অবস্থা এখনও অনেক খারাপ। দুই সিটে একজন করে নিচ্ছি। তারপরও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রী পেলেও আমরা স্টাফরা চলার মতো নিতে পারছি না।’
নূর মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ৪১০০ থেকে ৪২০০ টাকা ভাড়া পাচ্ছি। আমরা দুইজন স্টাফ কাজ করি এ গাড়িতে। দুজন মিলে ৮০০ টাকা পাই। প্রতিদিন ২৫০০ টাকার তেল ও সাড়ে ৭০০ টাকার ডিপি দিতে হয়। মোট ৩২০০ টাকা প্রতিদিন লাগবই। গাড়ির এই খাওন লাগবই, ইনকাম যাই হোক। গাড়ির খরচ ও আমরা দুজন নেয়ার পরে যা থাকে, তা গাড়ির মালিককে দিই। আমাদের ১২০০ টাকা বেতন, সেই বেতনও পাচ্ছি না। মালিককেও তো দিতে হবে কিছু, না দিলে এত টাকার গাড়ি আমরা কীভাবে চালামু? তারপরও আমাদের মালিকরা দেখতাছে, হেলপ করতাছে। টেকা পকেট থেকে দিয়া হেল্প করে না, গাড়ি দিয়া হেল্প করতাছে। সে কম নিয়া, আমাদেরকে দিয়া গাড়ি চালাইতাছে।’
‘তারপরও এই লকডাউনে যে কষ্ট করছি, এই দুই-তিনশ টাকা পাইয়া কোনোমতে সেই কষ্ট কমছে’, যোগ করেন এ চালক।
নূর মিয়ার সঙ্গে আলাপের একপর্যায়ে এসে হাজির হন ট্রাস্টেরই আরেকটি গাড়ির চালক মো. রমজান। তিনি বলেন, ‘অল্প কিছু দিন হলো ৪০০ টাকা করে ভাড়া পাচ্ছি। আমাদের গাড়ি একদিন চলে, একদিন বন্ধ। মানে অর্ধেক চলে আজকে, আর অর্ধেক চলে কালকে। তাইলে একদিন ৪০০ টাকা কামাই হলে আরেক দিন বহা (কর্মহীন)। ফলে দৈনিক ২০০ টাকা করে পড়ে।’
রমজান বলেন, ‘ডাইল দিয়া, লবণ দিয়া খাইয়া কোনো রকমে কাটাইতাছি। ভাউ নাই অহন, যে বাজার, এই বাজারের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বউ-পোলাইপান থুইয়া আইছি দেশে। ঘর ভাড়াই দিতে পারি না, চার মাসের ঘড় ভাড়া আটকে গেছে। বাসাভাড়া জোড়াতালি দিয়া চালাচ্ছি। কিছু দিই, কিছু আটকে আছে। পেটটা বাঁইচ্চা আছে আর কি।’
পিডি/এসআর/পিআর