রিজেন্ট চেয়ারম্যানকে পলাতক দেখিয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:২১ এএম, ০৮ জুলাই ২০২০

অডিও শুনুন

করোনাভাইরাস পরীক্ষা না করে সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করে, মামলা নং ৫।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এসপি সুজয় সরকার বলেন, র‌্যাব বাদী হয়ে মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৭ জনকে। এর মধ্যে আটজন গ্রেফতার রয়েছেন। রিজেন্টের চেয়ারম্যান শাহেদসহ নয়জনকে পলাতক হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সোমবার দুপুর ২টা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল প্রথমে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। সেখান থেকে আটজনকে আটকের পর র‌্যাবের দলটি মিরপুরে রিজেন্টের অন্য শাখায় অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কয়েকটি অনিয়ম ও প্রতারণার প্রমাণ পেয়েছি আমরা। প্রথমত, করোনা টেস্টের জন্য আসা রোগীদের বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করানোর কথা ছিল রিজেন্টের। কিন্তু আমরা দেখলাম তারা প্রায় ১০ হাজার জনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে, প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা টাকা নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এসব নমুনার অর্ধেকের বেশি পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দিয়েছে যা সম্পূর্ণ প্রতারণা।

রিজেন্ট সরকারকে জানিয়েছে তারা কোভিড রোগীদের ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছে। এই বলে তারা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ ক্লেইম করেছে। অথচ রোগীদের কাছ থেকেও তারা দেড় লাখ-দুই লাখ, আড়াই লাখ টাকা বিল করে আদায় করেছে বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি।

সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্টকে কোভিড হাসপাতালের এই অনুমতি দেয়ার আগে শর্ত ছিল এখানে যারা ভর্তি হবে, তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআইআর, জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট থেকে ফ্রি অব কস্ট (বিনামূল্যে) পরীক্ষা করাবে। আর রিজেন্ট বাসায় বাসায় গিয়ে ১০ হাজারের বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছে। এই স্যাম্পলের মধ্যে ৪২৬৪ জনের আইইডিসিআরসহ অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান থেকে টেস্ট করিয়েছে।

বাকি নমুনাগুলো টেস্ট না করে ভুয়া রিপোর্ট করেছে। আমরা আইইডিসিআরে রিপোর্ট ক্রসচেক করে দেখেছি, রিজেন্ট এগুলো তাদের পাঠায়নি। ভুয়া রিপোর্টের জন্য ৩৫০০ করে টাকা নিয়েছে। আমরা দেখলাম এ পর্যন্ত সে ৩ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়গুলো চেয়ারম্যান নিজে ডিল করেছে, অন্যান্য কয়েকজন কর্মীও ছিল।

অন্যদিকে মঙ্গলবার ঢাকার উত্তরায় রিজেন্টের মূল কার্যালয়সহ রোগীদের স্থানান্তরের পর সিলগালা করা হয়েছে উত্তরা ও মিরপুরের হাসপাতাল। মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন ‘করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করত রিজেন্ট হাসপাতাল’।

এছাড়াও সরকার থেকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করার অনুমতি নিয়ে রিপোর্টপ্রতি সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে আদায় করতো তারা। এভাবে জনগণের সাথে প্রতারণা করে মোট ৩ কোটি টাকার হাতিয়েছে রিজেন্ট। এই সমস্ত অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ। রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় থেকেই এই অপকর্মগুলো হত বিধায় এটি সিলগালা করা হয়েছে পাশাপাশি রোগীদের স্থানান্তর করে হাসপাতাল দুটিও সিলগালা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এর আগে গতকাল সোমবার রাতেই মো. সাহেদের মালিকানাধীন হাসপাতাল থেকে অননুমোদিত র‌্যাপিড টেস্টিং কিট ও একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।
সারওয়ার আলম বলেন, ওই গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিদফরের স্টিকার লাগানো ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনের চোখে ধুলো দিতেই ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিদফরের স্টিকার ব্যবহার করতেন।

অন্যদিকে রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের কার্যক্রম ‘অবিলম্বে বন্ধের’ নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মঙ্গলবার (৭ জুলাই) হাসপাতাল দুটি র‌্যাবের তরফ থেকে সিলগালা করে দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ) ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জারি হয়।

জেইউ/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।