দাবি আদায়ে অনড় মাধ্যমিকের শিক্ষকরা


প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ২৬ অক্টোবর ২০১৫

দুপুর সোয়া একটা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ` দেড়েক মানুষের উপস্থিতিতে একটি সমাবেশে বক্তৃতা চলছে। যিনি বক্তব্য দিচ্ছেন ও যারা মনোযোগ দিয়ে বক্তব্য শুনছেন তাদের পোশাক আশাক কেতাদুরস্ত নয়, একেবারেই সাদাসিধে। কেউ পরেছেন পাঞ্জাবি পায়জামা আবার কেউ পরেছেন সাধারণ শার্ট পেন্ট। অধিকাংশের পায়ে চামড়ার পুরোনো স্যান্ডেল।
 
কথা বলে জানা গেল তারা সকলেই মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক তবে নন-এমপিওভুক্ত (মান্থলি প্যামেন্ট অর্ডার) ।

গত এক থেকে দেড় দশক যাবৎ তাদের সকলেই দেশের বিভিন্ন মাধ্যমিক স্তরের (মাধ্যমিক, কলেজ,কারিগরি ও মাদ্রাসা) বিনাবেতনে শিক্ষকতা করছেন। বছরের পর বছর ধরে এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে আসলেও সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত পাননি তারা।

mu
 
এ কারণে সোমবার সকল থেকে ‘নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারশন’এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছেন মাধ্যমিকের শিক্ষকরা।

ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইসারত আলী জানান, এবার এমপিভুক্তিকরণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরেবেন না তারা।

এসময় নন-এমপিওভুক্ত দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের অনতিবিলম্বে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচিতে যোগদানের আহ্বান জানান তিনি।

আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী একটি কলেজের অধ্যক্ষ কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাগো  নিউজকে বলেন, আগে শিক্ষক হিসেবে গর্ববোধ করতাম কিন্তু এখন পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। বছরের পর বছর বেতনভাতা ছাড়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দিলেও এখন অধ্যক্ষ বললে মানুষ হাসাহাসি করে, সামনে না বললেও পিছনে বলে নন-এমপিও ভুক্ত অধ্যক্ষ আবার অধ্যক্ষ নাকি!

mu

সমাবেশে বক্তারা জানান, মাধ্যমিক স্তরে বিভিন্ন পর্যায়ে ৮ হাজারেরও বেশি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী ২০ লাখের অধিক শিক্ষার্থীও পাঠদানে নিয়োজিত।

তারা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো ননএমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও একই নিয়ম নীতিতে পরিচালিত হয়। একই কারিকুলাম, সিলেবাস ও প্রশ্নপদ্ধতি অনুসরণ করে। শিক্ষার্থীরা বোর্ড থেকে একই সার্টিফিকেট পায়। দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সাক্ষাতের চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারণে তা স্থগিত হয়।

পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার লহ্মীনারায়ণি ইসলামি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল আলিম মন্ডল বলেন, বছরের পর বছর বিনাবেতনে চাকরি করছি। বার বার  আশ্বাস দেয়া হলেও এমপিওভুক্ত করার প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি , পরিবার পরিজন আত্মীয়স্বজনরা এখন শিক্ষকতা করাকে বাঁকা চোখে দেখছেন।

নড়াইল জেলার কালিয়া থানার খড়রিয়ার রহিমা হাবিব দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক বায়েজিদ হোসেন জানান, ৮  বছর  ধরে বিনাবেতনে চাকরি করছি। ঘর সংসার চলে না। এখন চাকরির পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছি।

‘নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারশন’এর বরিশাল জেলার সভাপতি শিক্ষক বিনয় রায় ও সাধারণ সম্পাদক সৌরভ হোসেন বলেন, শিক্ষকতা মহান পেশা এখন আমাদের জন্য অপমানকর পরিস্থিতি ডেকে এনেছে।

সমাবেশ থেকে এমপিওভুক্তকরণ ছাড়াও অবিলম্বে  স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ইনডেক্স নম্বর, স্বীকৃতির সময় থেকে চাকরির বয়স গনণা করা, এমপিওভুক্তকরনে কোনো ধরনের অনিয়ম, পক্ষপাত, ঘুষ ও দূর্নীতি পরিহার ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তিকরণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন বন্ধ রাখার দাবি জানানো হয়।
 
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে ‘নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারশন’এর সাধারণ সম্পাদক  তাপস কুমার কুন্ডু, সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাবেক  সাধারণ সম্পাদক মো.শফিকুল  ইসলাম প্রমূখ বক্তব্য  রাখেন।

এমইউ/এসকেডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।