শঙ্কা নিয়েই বাড়ি ফিরছে সৌরভ


প্রকাশিত: ০৬:১৫ এএম, ২৬ অক্টোবর ২০১৫

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের গুলিতে আহত শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভ নিজ বাড়িতে ফিরছে। টানা ২৪ দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে আজ সোমবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছে সে। বেলা সাড়ে ১১ টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সৌরভের চিকিৎসার ব্যাপারে অবহিত করেন।

একটু খুঁড়িয়ে হাঁটলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শারীরিকভাবে পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত হয়েছে সৌরভ। তবে শারীরিকভাবে শঙ্কামুক্ত হলেও সৌরভের কোমল মনে গেঁথে যাওয়া সেই ভয়াবহ দৃশ্য এখনও মুছে যায়নি। শঙ্কা, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়েই বাড়ি ফিরছে সে। সেই সঙ্গে সৌরভের মা ও বাবা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন, বাড়ি ফেরার পর কি হবে এই ভেবে।

জানতে চাইলে সৌরভ জানায়, বাড়ি ফেরার কথা শুনে সে বেশ আনন্দিত। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে, আবার স্কুলে যাবে সে। তবে আগের মত খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বের হওয়া হয়তোবা আর কোনদিন হবে না। একা একা গ্রামের মাঠ-ঘাট ঘুরে বেড়ানোও তার কাছে অসম্ভব হয়ে উঠবে। সেই ভয়, সেই আতঙ্ক প্রতিনিয়তই তাড়া করছে তাকে। একা পেলে এমপি লিটন অথবা তার লোকজনেরা যদি কিছু একটা করে বসে এই ভেবে শঙ্কিত সৌরভ।

সৌরভ জানায়, মুই আগের মত করি চলাফেরা করবার চাং। মোর যাতে কিছু না হয় এ জন্যে সবার সাহায্য চাং।

এদিকে, ২৪ দিন পর বাড়ি ফেরার আনন্দের চেয়ে বিষাদের কালো মেঘ যেন দেখা দিয়েছে সৌরভের মা সেলিনা বেগম ও বাবা সাজু মিয়ার চোখে মুখে। এমপি লিটন জেলে থাকলেও তার লোকজন বাইরে। তাই গুম, অপহরণ, বসতবাড়ি ভাঙচুর, মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোসহ প্রাণনাশেরও আশঙ্কা করছেন তারা।

সাজু মিয়া জাগো নিউজকে জানান, গ্রামে গ্রামে ফেরি করে হাড়ি-পাতিল বেচি। কোন সময় কি হয় এই ভয়টাতো আছে। এমপি যদি জামিনে বের হয়া আইসে তাইলে তো মোক ছাড়বার নয়। অর লোকজনেরাও তো আছে। জাগো নিউজের এই প্রতিবেদকের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে সাজু বলেন, দ্যাখেন নাই কোটত যেদিন তোলে সেদিন ওর লোকেজনরা পুলিশের সঙ্গে কেমন করি মারামারি করছে?

শিশু সৌরভের বাবা সাজু মিয়ার অভিযোগ, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্বজনরা টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু তিনি সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তাই বাড়ি ফেরার পর পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছেন সাজু মিয়া।

সেলিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, স্বামী যদি ভয়ে হাড়ি-পাতিল না বেচি ঘরত বসি থাকে তাইলে তো না খেয়া মরবার নাগবে। আর গ্রামত ঘুরবার গেলেও তো বিপদ আছে। বাড়িত যাইয়া এ্যালা কি করমো তাই ভাবতোছি।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের ইনচার্জ সহকারী অধ্যাপক ডা. বাবলু কুমার সাহা জাগো নিউজকে জানান, সৌরভ এখন পুরোপুরি সুস্থ। খুঁড়িয়ে হাঁটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন হাটাহাটি করলে সব স্বাভাবিক হয়ে  উঠবে।

সৌরভের পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসরাঈল হোসেন মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, সৌরভের পরিবারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে আমাদের জানানো হয়নি। যদি তারা এ বিষয়ে আমাদের অবগত করেন তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সৌরভের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, প্রতি দিনের মতো গত ২ অক্টোবর শুক্রবার ভোরে গোপালচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সৌরভ (১০) বাড়ির পাশে রাস্তায় হাঁটতে বের হয়। এ সময় ওই পথ দিয়ে গাড়িতে করে এমপি লিটন বামনডাঙ্গাস্থ তার নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। গোপালচরণ গ্রামের ব্র্যাক মোড় কালাইর ব্রিজ এলাকায় পৌঁছে হঠাৎ করে গাড়ি থেকে সৌরভকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি গুলি ছোঁড়েন লিটন। এতে সৌরভের দু’পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়।

পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে লিটন তার লোকজন নিয়ে বামনডাঙ্গায় সৌরভকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ২ ঘণ্টা আটকে রাখেন। পরে কৌশলে অন্য পথ দিয়ে গিয়ে রংপুর মেডিকেলে সৌরভকে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর দিন সৌরভের বাবা সাজু মিয়া বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় এমপি লিটনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

জিতু কবীর/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।