রাজধানীর আশেপাশেও ফাঁকা হচ্ছে বাসা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৪ এএম, ০৪ জুলাই ২০২০

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে রাজধানীর বাড়িওয়ালারা বিপাকে পড়েছেন। এমন অনেক বাড়িওয়ালা পাওয়া গেছে যাদের বাসায় দুটি ফ্ল্যাট ফাঁকা রয়েছে। শুধু রাজধানী নয়, এর আশপাশে সাভার এলাকা থেকে শুরু করে, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জের মতো এলাকাতেও এর প্রভাব পড়েছে।

করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। কারও ব্যবসা চলছে না। কেউবা আবার ভয়ে ঢাকা ছাড়ছেন। করোনার সময়ে বাড়ি ভাড়া মওকুফ কিংবা কমানোর দাবি উঠলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য রাজধানী ছেড়ে গ্রামমুখী হচ্ছেন অনেকে। অনেকে আবার পরিবার-পরিজন গ্রামে রেখে নিজে মেসে উঠেছেন।

রাজধানী ও এর আশেপাশের বেশ কয়েকজন বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বাসা খুব বেশি একটা খালি থাকে না, কিন্তু এখন থাকছে। আবার অনেকে বড় ফ্ল্যাট ছেড়ে ছোট ফ্ল্যাটে উঠছেন।

jagonews24

উত্তর বাড্ডার আলীর মোড়ের পূর্বাঞ্চল সড়কের দুটি বাড়ির মালিক নোয়াখালীর মফিজ মিয়া। প্রায় ১০ বছর আগে বাড়ি দুটি করেন। প্রতি বাড়িতে ২৪টি করে ফ্ল্যাট। দুই রুমের ফ্ল্যাটগুলোর চাহিদা সবসময়ই বেশি। কোনো সময় ফাঁকা থাকত না। কিন্তু চলতি মাসে তার দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া হয়নি। এর আগে এমনটি কখনও হয়নি বলে জানান তিনি।

মফিজ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বাসায় টু লেট লাগানোর এক সপ্তাহের মধ্যেই ভাড়া হয়ে যেত। কারণ ঢাকায় এমন ছোট ফ্ল্যাট পাওয়া খুব মুশকিল। কিন্তু এই মাসে (জুলাই) দুটি ফ্ল্যাট ফাঁকা রয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছর সৌদিতে থেকে জমি কেনার পর ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়ি দুটি করেছি। এজন্য দুশ্চিন্তায় আছি।’

রাজধানীর কাঁঠালবাগানের ঢালে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন গোলাম রব্বানী। তিনি দেশীয় একটি কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান হিসেবে চাকরি করতেন। কিন্তু মার্চ থেকে তার কাজ বন্ধ। তিন মাসের বেতন পাননি। বাধ্য হয়ে গ্রামে রেখে এসেছেন পরিবার। এখন একটি মেসে উঠেছেন। সেই বাসাটিও এখন ফাঁকা বলে জানান গোলাম রব্বানী।

শুধু ঢাকা নয়, এর পার্শ্ববর্তী এলাকা সাভারের অবস্থা আরও খারাপ। বিশেষ করে যেসব বাড়িতে পোশাক শ্রমিকরা ভাড়া থাকতেন, তার অনেকগুলোই এখন ফাঁকা।

jagonews24

সাভারের রেডিও কলোনির অধিবাসী সরকারি চাকরিজীবী তাজ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ির দুটি ফ্ল্যাট এ মাসে ফাঁকা। কোনো ভাড়াটিয়া পাইনি। ভাড়া কমিয়ে দিয়েছি, তাও পাইনি।’

সাভারের জোড়পুল এলাকার একটি ডেনিম প্রসেসিং প্ল্যান্টের কাছে ২৫টি ঘর ভাড়া দিতেন খলিল শেখ। সেখানে ঘর ভাড়া নেয়া বেশিরভাগই পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। আবার কেউ কেউ চা, কেউবা সবজি বিক্রি করতেন। করোনার কারণে এখন অর্ধেক ঘরই ফাঁকা বলে জাগো নিউজকে জানান খলিল শেখ। বিশেষ করে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।

যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া, গোবিন্দপুর, শেখদী, দনিয়া, পলাশপুর, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল এবং ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার, হাজীনগর, বামৈল, কোনাপাড়া এলাকায় অনেক ফ্ল্যাট খালি রয়েছে।

উত্তর রায়েরবাগ এলাকার বেশিরভাগ দেয়ালে দেয়ালে টু-লেট, বাসা ভাড়া হবে- এমন অসংখ্য লিফলেট সাঁটানো দেখা গেছে। এ এলাকার চারতলা বাড়ির মালিক হাসিবুর রহমান। তার বাড়ির সামনে বাড়ি ভাড়ার নোটিশ লাগানো।

jagonews24

তিনি বলেন, ‘আমার তিনটি ফ্ল্যাট খালি। গত কয়েক মাস ধরে দু-তিনটি ফ্ল্যাট খালি। অযথা গ্যাস বিল টানছি। এই মাস থেকে তা আরও বেড়ে গেল।’

হাসিবুর রহমান আরও জানান, তার বাড়ির এক ভাড়াটিয়া একটি কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করতেন। আরেকজন কাপড়ের ব্যবসা করতেন। তারা দুজনই পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন।

ডেমরার হাজীনগরের পাঁচতলা বাড়ির মালিক শামীমা বেগম। স্বামী চার বছর আগে মারা গেছেন। তিনি এখন সবকিছু দেখাশোনা করেন। বলেন, ‘আমার ২-৩টি ফ্ল্যাট খালি। আগে পুরো বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া পেতাম। গত দুমাস ধরে পাচ্ছি ৪০ হাজার টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে সন্তানকে লেখাপড়া করাই, সংসার খরচ চলে। দুজন ভাড়াটিয়া করোনাভাইরাসের কারণে খুব বেকায়দায় পড়ে বাসা ছেড়ে দিয়েছে গত এপ্রিলে। এরপর আর বাসা ভাড়া হয়নি।’

এইচএস/আরএমএম/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।