ওয়ারীর একাংশ ৪ জুলাই থেকে লকডাউন
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের লাগাম টানতে আগামী ৪ জুলাই থেকে ২১ দিনের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ওয়ারী এলাকার কিছু সড়কসহ একাংশ লকডাউন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) ডিএসসিসির নগর ভবনে লকডাউন বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা শেষে এ তথ্য জানান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেন, আগামী ৪ জুলাই থেকে ২১ দিনের জন্য ওয়ারীর কিছু সড়ক লকডাউন করা হবে। আমরা এ বিষয়ক চিঠি পেয়েছি। আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। জনগণ যেন আতঙ্কিত না হন, বিভ্রান্তিতে না পড়েন এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যেন প্রয়োজনীয় পণ্য ওই এলাকার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে পারে সে কারণে কিছুটা সময় দেয়া হয়েছে। সবাই যেন প্রস্তুতি নিতে পারেন।
মেয়র বলেন, লকডাউন এলাকায় সার্বিকভাবে সব কিছুই বন্ধ থাকবে, শুধু ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনীয় যাতায়াত সুবিধার জন্য ওয়ারী এলাকার দুটি পথ খোলা থাকবে। বাকি পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
ফজলে নূর তাপস বলেন, এ এলাকায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে। নমুনা সংগ্রহ করার জন্য বুথ থাকবে এবং সিটি করপোরেশনের মহানগর জেনারেল হাসপাতালে আক্রান্তদের জন্য আইসোলেশন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সরবরাহের জন্য মীনাবাজার ও স্বপ্নসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যেসব এসওপি দেয়া হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা হবে।
জানা গেছে, ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে প্রথম লকডাউন হচ্ছে ওয়ারীর কয়েকটি সড়ক, যা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে।
এ লকডাউন বাস্তবায়নে গতকাল সোমবার (২৯ জুন) সংশ্লিষ্ট মহলে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে ওয়ারী এলাকার তিনটি প্রধান সড়ক এবং পাঁচটি গলিপথ লকডাউনের কথা বলা হয়েছে। প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে টিপু সুলতান রোড, জাহাঙ্গীর রোড এবং জয় কালীমন্দির থেকে বলদা গার্ডেন পর্যন্ত সড়ক। গলিপথগুলোর মধ্যে রয়েছে লারমিনি রোড, হরে রোড, ওয়ার রোড, রানকিন রোড এবং নবাব রোড।
এর আগে ওয়ারী এলাকা নিয়ে বিশ্লেষণের পাশাপাশি এটিকে লকডাউন করার বিষয়ে প্রস্তুতি নেয় ডিএসসিসি। এছাড়া লকডাউন এলাকায় মানুষের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ, নমুনা সংগ্রহ, হোম কোয়ারেন্টাইন, লকডাউনের কারণে কর্মহীনদের খাদ্য ব্যবস্থাপনা, টেলিমেডিসিন সার্ভিস, রোগী পরিবহন, প্রয়োজনীয় পণ্য হোম ডেলিভারি ও মনিটরিং কমিটিসহ অন্যন্য ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা হবে এসব বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়।
মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটি কেড়ে নিয়েছে এক হাজার ৮৪৭ জনের প্রাণ। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ৬৮২ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৮৩ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, গত ৩১ মে পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৯২ জন। চলতি ১ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ১৫৫ জনে। অর্থাৎ মারা যাওয়াদের মধ্যে ৬৩ শতাংশই চলতি মাসে (জুন)।
এদিকে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভেন্টিলেটরে যাওয়া রোগীদের প্রায় সবাই মারা গেছেন। তাই করোনা চিকিৎসায় ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজন নেই।
তার দাবি, দেশের ৪০০ ভেন্টিলেটরের মধ্যে সাড়ে তিনশ ব্যবহারই হয়নি।
এএস/এইচএ/পিআর