সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা অনুপস্থিত : টিআইবি


প্রকাশিত: ১০:১৬ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৫

দশম সংসদের ২য় থেকে ৬ষ্ঠ অধিবেশনের গড় বৈঠককাল, আইন পাসের ক্ষেত্রে বিল প্রতি ব্যয়িত গড় সময়, প্রতি কার্যদিবসে সদস্যদের গড় উপস্থিতির হার বৃদ্ধি এবং কোরাম সংকট তুলনামূলকভাবে হ্রাস পেলেও ‘প্রধান বিরোধীদল’ কর্তৃক সরকারের কার্যক্রমের বিরোধিতার পরিবর্তে স্তুতি এবং সরকারি দলের সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে নজিরবিহীন লেজুড়বৃত্তির কারণে সংসদের প্রত্যাশিত কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
 
রোববার দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশনের কার্যক্রমের ওপর টিআইবির পর্যাবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ ভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদন ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। এসময় গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরে সংসদকে কার্যকর করতে ১২ দফা সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। সংস্থার ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফাতেমা আফরোজ এবং মোরশেদা আক্তার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

গবেষণা প্রতিবেদনটিতে ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত (দশম সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন) পরিমাণবাচক এবং গুণবাচক তথ্য সংগৃহীত হয়। প্রত্যক্ষ তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি প্রচারিত সংসদ কার্যক্রম এবং টিআইবির গবেষণা দলের সদস্য কর্তৃক অধিবেশন সরাসরি পর্যবেক্ষণ। এছাড়া পরোক্ষ তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত বুলেটিন ও কমিটি প্রতিবেদন, সরকারি গেজেট, প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন, বই ও প্রবন্ধ ও সংবাদপত্রের তথ্য ইত্যাদি।  

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দশম সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশনে সংসদ নেতার উপস্থিতি ছিল মোট কার্যদিবসের ৮৩ শতাংশ এবং বিরোধীদলীয় নেতার উপস্থিতি ছিল ৫৭ শতাংশ। দশম সংসদে অধিবেশনের গড় বৈঠককাল, আইন পাসের ক্ষেত্রে বিল প্রতি ব্যয়িত গড় সময় ও প্রতি কার্যদিবসে সদস্যদের গড় উপস্থিতির হার তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি এবং কার্যদিবসের গড় কোরাম সংকট তুলনামূলকভাবে হ্রাস পাওয়ার মতো কতিপয় ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও সংসদের প্রত্যাশিত কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর থেকে কথিত ‘প্রধান বিরোধী দল’ কর্তৃক সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে প্রত্যাশিত জোরালো ভূমিকার ঘাটতি এবং অসংসদীয় আচরণ ও ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারের শক্তিশালী ভূমিকার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা, বিভিন্ন কাজের পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান ও অনুরোধ ব্যতীত জোরালো সমালোচনা করে প্রধান বিরোধী দলকে প্রত্যাশিত অবস্থান নিতে দেখা যায়নি।

এছাড়া সংসদের বাইরের রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রধান বিরোধীদলকে সম্মিলিত সুরে আক্রমণাত্মক সমালোচনায় লিপ্ত হতে দেখা যায়।

উল্লেখ্য, স্বতন্ত্র সদস্যদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ সরকারি জোটের প্রধান দলের সাংগঠনিক পদে বহাল রয়েছে।

দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সকল সংসদীয় (৫০টি) কমিটি গঠিত হলেও বিরোধীদলের মাত্র একজন সদস্যকে কমিটির সভাপতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে কমিটিগুলোতে সদস্যদের সার্বিক গড় উপস্থিতি ছিল ৫৬ শতাংশ।

কমিটিতে অনেক সদস্যের কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পদাধিকার বলে সদস্য হওয়ার কারণে এবং কোনো কোনো কমিটিতে পূর্বতন মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির সভাপতি হওয়ায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

অষ্টম, নবম ও দশম সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশনের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিজ দল ও সরকার দলের প্রশংসা হয়েছে ৭৫০০ বার, সংসদের বাইরের রাজনৈতিক জোটের সমালোচনা হয়েছে ৭২৬৮ বার।

এসএ/এসএইচএস/একে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।