দূরপাল্লার বাসে যাত্রী যেন সোনার হরিণ!

জসীম উদ্দীন
জসীম উদ্দীন জসীম উদ্দীন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৫ পিএম, ২৭ জুন ২০২০

‘সকাল ৭টায় বাস ছাড়ার কথা। কিন্তু সকাল ১০টা-১১টা বাজলেও সেই বাস ছাড়তে পারে না। কারণ যাত্রী নেই। এক ঘণ্টায় একটা করে যাত্রী আসে ভাই! কাউন্টার আছে মনে করেন ৫০টা। দু-একজন যাত্রী এলেই কাউন্টারগুলোর স্টাফরা দৌড়াদৌড়ি, হাঁকডাক আর টানাটানি শুরু করে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন, কী ভাই কই যাইবেন। দুই সিটে এক যাত্রী বসার নিয়মে ভাড়াও বেশি। করোনার ভয়ে যাত্রী কম, ন্যূনতম যাত্রীও নেই। যাত্রী কম হওয়ায় আমাদের (শ্রমিকদের) সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।’

ঢাকা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলীতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঈগল পরিবহনের কাউন্টার স্টাফ আলী মোহাম্মদ। প্রায় একই রকম কথা উঠে আসে অন্যান্য পরিবহনের কাউন্টার স্টাফদের মুখে।

jagonews24

পরিবহন কর্মচারী-শ্রমিকরা বলছেন, যাত্রী না থাকায় দূরপাল্লার অধিকাংশ পরিবহনের ট্রিপ কমে গেছে। ১০ ট্রিপের জায়গায় যাচ্ছে একটি থেকে দুটি। তাও আবার নির্ধারিত সময়েরও পর।

শনিবার সকালে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় সারি সারি সাজানো দূরপাল্লার বাস। কিন্তু যাত্রী নেই। যাত্রী যেন সোনার হরিণ। কোনো যাত্রী এলেই ১০-২০ পরিবহনের স্টাফের মধ্যে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। যাত্রীর ব্যাগ নিয়েই টানাটানি করতে দেখা যায় পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে।

গাবতলী বাস টার্মিনালের ভেতর অন্য সময় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা যেত না। সেখানে এখন যাত্রী নেই বললেই চলে। আবার কাউন্টার স্টাফদের হাঁকাডাকে বোঝা যায় যাত্রীর আগমন। বলতে গেলে যাত্রীর চেয়ে স্টাফদের সংখ্যাই বেশি বাস কাউন্টারগুলোতে।

jagonews24

বরিশাল রুটের হানিফ পরিবহনের কাউন্টার স্টাফ আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে যাদের দেখছেন তাদের সবাই এখানকার কাউন্টারের স্টাফ। যাত্রী নেই। যেসব যাত্রীও বা আসছেন তাদের ব্যাগ-বোঁচকা বেশি। গাট্টি-বোঁচকা বাইন্ধা ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রী না থাকায় শ্রমিকদের ছাঁটাই করতে হয়েছে। যাত্রী নেই, ইনকাম নেই, তাই অনেক শ্রমিক ছাঁটাই করছেন মালিকরা।’

তিনি বলেন, ‘বরিশালে যেখানে দৈনিক সকালে সাত থেকে আটটা গাড়ি যেত হানিফের সেখানে এখন যাচ্ছে দুটা। আবার কখনও ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী নিয়ে যেতে হয়। সামনে যে কী হয়, আবারও লকডাউন দিলে তো যাও চলছে তাও বন্ধ হয়ে যাবে। আতঙ্কে যাত্রী আসে না। যাত্রী না আসায় আমরা নিজেরাও আতঙ্কে আছি, কারও কাজ আছে, কারও নাই, কারও বেতন না দেয়ায় বাড়ি থেকে ঢাকায় থাকা-খাওয়ার টাকার জোগান করতে হচ্ছে।’

jagonews24

বরিশাল রুটের শ্যামলী পরিবহনের সামনে কথা হয় যাত্রী শহীদুল ইসলামের সাথে। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকার বাসা ছেড়ে দিয়েছি। তিন মাস ধরে বেকার। উবারে প্রাইভেটকার চালাতাম। চাকরিটা চলে গেল। ঢাকায় কর্ম না থাকায় থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই ফিরে যাচ্ছি।’

শ্রমিকরা বলেন, সচেতন যাত্রীরা বাসা থেকে বের হচ্ছেন না, দুই সিটে এক যাত্রী হওয়ায় ভাড়াটাও বেড়ে গেছে। ৪০ সিটের বাসে যাত্রী এখন হওয়ার কথা ২০ জন। কিন্তু সেই অনুপাতে যাত্রী হচ্ছে না। মালিকরাও গাড়ি ছাড়তে পারছেন না। যাত্রী কম হওয়ায় ট্রিপ কমে গেছে। সুরক্ষাসামগ্রী রাখছি। ভালো ব্যবস্থা রেখেছি। লাভ কী যাত্রী নিয়েই আমাদের রুটি-রুজি। যাত্রী না থাকায় আমাদের রুটি-রুজিতে টান পড়েছে। একেক পরিবহনের চার-পাঁচজন শ্রমিক ছাঁটাই করেছে মালিকপক্ষ।

jagonews24

উত্তরবঙ্গের নাবিল পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের স্টাফ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ট্রিপ কমেছে। কুড়িগ্রামে আগে মোট সাতটা যেত বাস। সেখানে যাচ্ছে তিনটা। নীলফামারীতে রাতে দুটা, দুপুরে একটা যাচ্ছে। জলঢাকায় তিনটা যেত এখন যাচ্ছে মাত্র একটা। কারণ তো দেখছেনই, কাউন্টারে যাত্রী নেই। যাত্রী না থাকলে ফাও বাস চালানো তো মুশকিল।’

জেইউ/বিএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।