কারো সাথে যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:৩৩ পিএম, ১৮ জুন ২০২০
ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল ভালোভাবেই। উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত ছিল। দারিদ্র্যসীমা যেখানে ৪০ ভাগ ছিল সেটাকে আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮.১ ভাগে উন্নীত হয়েছিল। হঠাৎ অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাস সব বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়। অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে। যাতায়াত কার্যক্রম সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই একটা ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা থেকে সারা বিশ্ব যেন মুক্তি পায়, আমরাও যেন মুক্তি পাই- এটাই আমাদের চাওয়া।

আজ বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বানৌজা 'সংগ্রাম'র কমিশনিংয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বানৌজা 'সংগ্রাম'র কমিশনিং করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করতে চাই না, আমরা শান্তি চাই। আমরা শান্তি চাই এটা সত্য, আবার কেউ যদি আমাদের ওপর হামলা করে তার জবাব দিতে তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানসম্পন্ন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুলতে চাই। নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন এবং ইতোমধ্যে আমরা আধুনিক সরঞ্জাম দিয়েছি। যেমন- খুলনা শিপইয়ার্ড আমি প্রথম নৌবাহিনীর হাতে দিয়ে দেই। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের ড্রাই ডক নৌবাহিনীকে দিয়ে দিয়েছি। আগামীতে আমাদের আরও বেশি টেকনিক্যাল হতে হবে, দক্ষতা অর্জন করতে হবে, শিখতে হবে ভবিষ্যতে যেন আমরা নিজেরাই আমাদের জাহাজ তৈরি করতে পারি। আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে আমরা যেন বিদেশে জাহাজ রফতানি করতে পারি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ বানৌজা ‘সংগ্রাম’ কমিশনিংয়ের অনুষ্ঠানে আমি সরাসরি উপস্থিত হতে পারছি না, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বৈশ্বিক মহামারির কারণে আমাদের চলাচল সীমিত হয়ে গেছে, সে কারণেই আজকে উপস্থিত থাকতে পারছি না। আমি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান করতে পারছি, এজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

বাংলাদেশে একটা নৌবাহিনীর ঘাঁটি হোক পাকিস্তান হওয়ার সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এটা চেয়েছিলেন। ছয় দফা দাবিতেও সেটা উল্লেখ করেছিলেন । স্বাধীনতার পর নৌবাহিনী অফিসার ও সদস্যরা বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন দেশ গড়ার কাজে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশটাকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে তিনি তা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর খুব সীমিত সম্পদ নিয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। এমনকি আমাদের বন্ধুপ্রতিম ভারতের কাছ থেকে দুটি জাহাজ নিয়ে এসে তিনি নৌবাহিনীর প্রথম যাত্রা শুরু করেন। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি দেশ। এ সময় এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া ছিল খুব কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী... এটা যে একটা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক।

তিনি বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। সেদিন আমার মা, আমার ভাই ক্যাপ্টেন মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, লে. শেখ জামাল ও ছোট শিশু রাসেল সেদিন শাহাদত বরণ করেছিলেন। আমি আজ তাদের কথা স্মরণ করছি। স্বাধীন বাংলাদেশকে তিনি যেভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সে স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। দীর্ঘ ২১ বছর পরে যখন সরকারে আসি, তখন শুধু বাংলাদেশকে নয়, বাংলাদেশের উন্নতি নয়, বাংলাদেশের এই তিন বাহিনী কিভাবে গড়ে তোলা যাবে সেটাও লক্ষ্য ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে আমার বাবার কী স্বপ্ন ছিল আমি তার পরিকল্পনার কিছুটা জানতাম। কাজেই তার আদর্শ নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা শুরু করি। তখন আমরা আর্থিকভাবে প্রচণ্ড সমস্যায় ছিলাম। এই আর্থিক সমস্যার মাধ্যমে আমরা অনেক কাজে হাত নিয়েছিলাম। এশিয়াতে তখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। ওই অবস্থায় আমরা তখন নৌবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক ফ্রিগেট বানৌজা ‘বঙ্গবন্ধু’ ক্রয় করি। সেই সাথে সাথে নৌবাহিনীকে আরো সুসংগঠিত এবং সুসজ্জিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

তিনি বলেন, জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে আমাদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করে দিয়েছেন, সেই নীতিমালার ভিত্তিতে আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করেছি। তারই ভিত্তিতে আমরা প্রত্যেকটা বাহিনীকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নিয়েছি। নৌবাহিনীতে সাবমেরিন যুক্ত হয়েছে, এভিয়েশন সিস্টেম যুক্ত হয়েছে, এখন আমাদের নৌ-বাহিনী ত্রিমাত্রিক। আমি অভিনন্দন জানাই নৌবাহিনীর সকল সদস্যকে। নৌবাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধেও জীবনকে বাজি রেখে অনেকে যুদ্ধ করেছেন। এতো ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করেছেন যে এখনকার সময়ে যা চিন্তাও করা যায় না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ৭৫ পরবর্তীতে যারা সরকারে এসেছিল তারা এ বিষয়টি জানতো কি-না...তারা কোনো উদ্যোগই নেয়নি। ৯৬-তে আমরা সরকারে আসার পর এ বিষয়ে যতো তথ্য-উপাত্ত ছিল, তা সংগ্রহ করি এবং কিছু কাজ করে যাই। দ্বিতীয়বার যখন আবার সরকারে আসি তখন আবার উদ্যোগ নিই। সমুদ্রসীমা আমাদের যে অধিকার সেই অধিকার অর্জন করতে হবে । আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে, আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশ একদিকে মিয়ানমার, আরেকদিকে ভারত, এই দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে আমরা আমাদের সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালে ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো । আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি । এর মাধ্যমে আজ আমরা চিটাগাং না গিয়েও বানৌজা ‘সংগ্রাম’ এর কমিশনিং করতে পারছি । এটা ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই আজ সম্ভব হলো। তারপরেও বলবো এতে আসলে মন ভরে না নিজে উপস্থিত থাকাটা ভালো ছিল। ভবিষ্যতে আবার ইনশাল্লাহ আপনাদের সাথে মিলিত হব এবং সেখানে যাব।

তিনি বলেন, এই জাহাজ বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে নিয়ে আসবে। জাহাজের নামটা খুব ভালো হয়েছে ‘সংগ্রাম’। সংগ্রাম করে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের সংগ্রামের পথেই থাকতে হয় । এখন আবার করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

বানৌজা ‘সংগ্রাম’ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে যারা যাবেন প্রত্যেকের প্রতি আমার আশীর্বাদ রইল, শুভাশীষ রইল, প্রত্যেকেই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন । আগামীকাল যারা রওনা হয়ে যাবেন তারা যেন নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছান। সবাই সুস্থ থাকেন, আপনাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আপনারা যেন যথাযথভাবে পালন করতে পারেন, আপনারা যেখানে যাচ্ছেন সেখানে যেতে সময় লাগবে। কারণ, আমি জানি যে সাগরের অবস্থা ভালো না । আপনারা নিরাপদে যাবেন সেটাই আমার কামনা। অহেতুক কোনো ঝুঁকি নেয়ার দরকার নেই। যেখানে যাচ্ছেন নিজেকে সুরক্ষিত রাখা দরকার, সুরক্ষিত রাখবেন।

এফএইচএস/এনএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।