মাস্কের ব্যবহার বাড়লেও মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য প্রতিনিয়তই বলা হচ্ছে। এসব স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে- ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই মুখে মাস্ক পরিধান করা, নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া ইত্যাদি। তবে নিয়মিতই এসব নির্দেশ দেয়া হলেও শুরুর দিকে তা মেনে চলার প্রবণতা কম ছিল।
কিন্তু সম্প্রতি সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের মাঝে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে এখনও রাস্তায় শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার চর্চা সঠিকভাবে হচ্ছে না।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও দুই মাসের সাধারণ ছুটি শেষে জীবন ও জীবিকার তাগিদে সীমিত পরিসরে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। গত ১ জুন থেকে গণপরিবহন চালু হয়েছে। ছোট বড় শপিং মল ও বিভিন্ন মার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে। শুরুর দিকে গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যা কম হলেও বর্তমানে যাত্রী সংখ্যাও বেড়েছে। সেইসঙ্গে রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি ও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সংক্রমণ ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও স্বাভাবিক হচ্ছে নগরজীবন!
সোমবার (১৫ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় বের হওয়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখে মাস্ক পরিধানের প্রবণতা আগের তুলনায় ব্যাপকহারে বেড়েছে। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নআয়ের দরিদ্র রিকশাচালক, দিনমজুর, ফুটপাতের সাধারণ দোকানিসহ সকলেই মাস্ক ব্যবহার করছেন। তবে অনেকেই সঠিক নিয়ম মেনে মাস্ক পরিধান করছেন না। মুখে মাস্ক পরলেও ক্ষণে ক্ষণে তা মুখের নিচে নামিয়ে রাখছেন।
সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটডোরে মাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন উত্তর শাজাহানপুরের বাসিন্দা শাহাদাত আলী। বৃদ্ধ মা ও ছেলের হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পরে এবং নির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে টিকেট কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
জাগ নিউজকে তিনি জানান, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ প্রতিরোধে বাসার বাইরে বের হলে সকলেরই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে যে কারও মাধ্যমে সংক্রমিত এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। এ কারণেই তিনি নিজে এবং বৃদ্ধ মাকে হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পরিধান করে তবেই এসেছেন।
বারডেম হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন কলা বাগানের বাসিন্দা আনুমানিক পঞ্চাশোর্ধ্ব গুলনাহার বেগম। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন টেলিভিশন খুললেই দেখি করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আমাদের মতো বয়স্কদের বেশি। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস ও অন্যান্য ব্যাধি রয়েছে তাদের ঝুঁকি আরও বেশি।’ এ কারণেই তিনি মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করেছেন বলে জানান।
এদিকে রাজধানীসহ সারা দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত এবং ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, ১৫ মার্চ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯০ হাজার ৬১৯ জন এবং মৃতের সংখ্যা এক হাজার ২০৯ জনে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৯৯ জন আক্রান্ত এবং ৩৮ জনের মৃত্যু হয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুরোধে সরকার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সংক্রমিত এলাকার রোগীর সংখ্যা অনুপাতে গ্রিন, ইয়েলো এবং রেড জোনে ভাগ করে লকডাউন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার ইতিমধ্যেই রেড জোন ঘোষণা করে পুরোদমে লকডাউন বাস্তবায়ন চলছে। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অর্ধশতাধিক রেড জোন তালিকাভুক্ত এলাকায় লকডাউন কার্যকর করা হবে।
এমইউ/এফআর/এমএস