এএসআই ইব্রাহিম হত্যা : তদন্তে নেমেছে র‌্যাব-পুলিশ


প্রকাশিত: ১০:১৯ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০১৫

রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন গাবতলী এলাকায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ইব্রাহিম মোল্লা হত্যার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। ইতোমধ্যে খুনিদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। অন্যদিকে পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্তে নেমেছে র‌্যাব। এএসআই ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে মাসুদ রানা নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, দারুস সালাম থানার এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা হত্যার ঘটনায় ছায়া তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থলে র‌্যাব-৪ একটি দলকে পাঠিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা সক্রিয়ভাবে তদন্ত কাজ করছে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে জানানো হবে। খুনি শনাক্ত হওয়া বিষয়টি তিনিও নিশ্চিত করেন।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাবতলীর পর্বত সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকায় ‍দুই দুর্বৃত্তের ব্যাগ তল্লাশি করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে আহন হন এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান তিনি।

ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড প্রসিকিউশন) শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান, যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) কৃষ্ণপদ রায়, মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) কাইয়ুমুজ্জামান, দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান।

রাতেই আটককৃত মাসুদ রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দারুস সালাম থানায় যান তারা। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড প্রসিকিউশন) শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ৮টার দিকে একটি বাসে গাবতলীতে অবতরণ করে দু’জন।

তখন গাবতলী পর্বত সিনেমা হল সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের নিয়মিত চেকপোস্ট চলছিল। সেখানে আসা মাত্র পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়ে আগন্তুক ওই দু`জন। তল্লাশিকালে ছুরিকাঘাতের শিকার হন ইব্রাহিম মোল্লা। মাসুদ রানা নামে একজনকে আটক করতে পারলেও মূলহোতা পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘এটা একটি আকস্মিক ঘটনা। আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছি। খুব দ্রুত মূলহোতা ধরা পড়বে।’ মূলহোতা শনাক্ত হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ মূলহোতা শনাক্ত হয়েছে। আমরা আটক মাসুদ রানার মাধ্যমে তার নাম-পরিচয় পেয়েছি। তিনি কী করেন, কোথায় থাকেন সব তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেসব তথ্য এখন দেয়া যাচ্ছে না।

আটককৃতের কাছ থেকে কোনো আলামত জব্দ করা গেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আটক মাসুদের কাছ থেকে একটি ক্যামেরা জব্দ করা হয়েছে। ক্যামেরাটি কী কাজে কেন আনা হয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এর আগে প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশ কনস্টেবল নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, ইব্রাহিম মোল্লা নিচু হয়ে হেলে ওই দুই দুর্বৃত্তের কাছে থাকা ব্যাগের চেইন খোলার চেষ্টা করছিলেন। এসময় একজনকে দৌড় দিতে দেখা যায়। অপরজন ইব্রাহিম মোল্লার পেটে ‍ও বুকে এলোপাথারি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমা আকতার জানান, হত্যার উদ্দেশেই ইব্রাহিম মোল্লাকে তিনটি ছুরিকাঘাত করা হয়। এর একটি বুকের ডান দিকের উপরের আঘাত করা হয়। যা খুবই গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। পেটের উপরের দিকে ও পেটের নিচের দিকে আরো দুটি ছুরিকাঘাত করা হয়। এসব ‘সিম্প্টম’ দেখে মনে হচ্ছে খুনিরা প্রফেশনাল কিলার।

দুর্গাপূজা শুরুর পর রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্তায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। বিভিন্ন স্থানে সড়কে বসানো হয় চেকপোস্ট। কিন্তু এর মধ্যেই ঢাকার প্রবেশমুখ গাবতলীতে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে খুন হলেন এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা।

উল্লেখ্য, নিহত এএসআই ইব্রাহিম মোল্লার বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার সোনারকুলি ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামে। বউ ও এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন ৪৮/৩ বর্ধবাড়ি এলাকার একটি বাসার পাঁচতলায় থাকতেন তিনি। গত দেড় বছর যাবত তিনি দারুস সালাম থানায় কর্মরত।

জেইউ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।