১৩০ স্থাপনায় এডিসের লার্ভা, আড়াই লাখ টাকা জরিমানা
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
বৃহস্পতিবার অভিযানের ষষ্ঠ দিনে ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে (৫৪টি) মোট ১২ হাজার ৭৭৪টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন ইত্যাদি পরিদর্শন করে ১৩০টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এছাড়া ৯ হাজার ১৮০টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১২টি মামলায় মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যান্য বাড়ি ও স্থাপনার মালিককে সতর্ক করা হয়েছে।
গত ৬ জুন থেকে আজ পর্যন্ত ৫৪টি ওয়ার্ডে মোট ৮০ হাজার ৩৬৬টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে মোট ৯৮৪টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৫৫ হাজার ৯৮১টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এছাড়া এই ৬ দিনে মোট ৭ লাখ ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অভিযান চলাকালে যেসব বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা কিংবা এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে, তার ছবি, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি অ্যাপে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এর ফলে অভিযান শেষে ডিএনসিসির কোন কোন এলাকায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে তার একটি ডাটাবেস তৈরি হবে। ডাটাবেস অনুযায়ী পরবর্তীতেও তাদেরকে মনিটর করা সহজ হবে।
বৃহস্পতিবার উত্তরা এলাকায় মোট ১ হাজার ২১৪টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ২২টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৮৫৭টি স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এ সময় ১টি স্থাপনার মালিককে মোট ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মিরপুর-২ অঞ্চলের মোট ২ হাজার ৯৩২টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৭টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ২ হাজার ১৮২টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এ সময়ে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিউল আজম মিরপুর ১ নম্বর সেকশন এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ৫টি মামলায় মোট ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মহাখালী অঞ্চলের অধীনে আজ মোট ১ হাজার ৫২৫টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩৩টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ১ হাজার ২টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাহিদ আহসান মধুবাগ ও নয়াটোলা এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় ৪টি মামলায় মোট ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
মিরপুর-১০ অঞ্চলে ১ হাজার ৬৪৫টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১১টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৭৯৮টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সালেহা বিনতে সিরাজ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ১টি মামলায় মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
কারওয়ান বাজার অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৭৩৭টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৯টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ১ হাজার ৪৯৫টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট মনিপুরী পাড়া এলাকায় ১টি নির্মাণাধীন ভবনে এডিস লার্ভা পাওয়ায় মাইক্রো হান্ট ডেভেলপারসকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
হরিরামপুর অঞ্চলে মোট ১ হাজার ১৫৯টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৩টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৯৩৭টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
দক্ষিণখান অঞ্চলে মোট ৮৭৫টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৬টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া ৫৩৪টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। উত্তরখান অঞ্চলে মোট ৬৪৩টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৩টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৫২৭টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
ভাটারা অঞ্চলে মোট ৪৮৩টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৭টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৩৮০টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। সাঁতারকুল অঞ্চলে মোট ৫৬১টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৯টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৪৬৮টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
এডিস মশার প্রজননস্থলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনাপূর্বক কীটনাশক ছিটানো হয়েছে এবং জনসাধারণকে এ বিষয়ে পরবর্তীতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলমান এই অভিযানের আগে গত ১৬ মে থেকে শুরু করে ঈদুল ফিতরের পূর্ব পর্যন্ত ১, ৬, ১২, ১৮ ও ৩২ নম্বর মোট ৫টি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। সে সময় ৯ হাজার ৪৬৩টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৮৭টিতে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পাওয়া যায়।
চিরুনি অভিযানের সাথে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ১০ মে থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ২৮ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
লার্ভা পাওয়া স্থানগুলো হলো- পরিত্যক্ত টায়ার, বালতি, ফুলের টব, বোতল, পানির মিটার, গ্যারেজ, পানির হাউজ, মাটির পাত্র, ভাঙ্গা মগ, বাড়ির মেঝে, পানির ট্যাংক, প্লাস্টিকের পাত্র, ছাদের ড্রেন, দইয়ের পাত্র, পরিত্যক্ত কমোড, ডাবের খোসা, ভাঙা পাতিল, বেইজমেন্ট, দুই বাড়ির মধ্যবর্তী স্থান ইত্যাদি।
অভিযান চলাকালে সব এলাকাতেই এলাকাবাসীকে এডিস মশার বিস্তার রোধে সচেতন করা হয় এবং জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধানসহ সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ প্রদান করা হয়। অভিযান চলাকালে ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ, ডিএনসিসির বর্জ্য ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন।
এএস/এমএসএইচ/পিআর