সফলতা মানে হলো পরিশ্রম : প্রীত রেজা


প্রকাশিত: ১১:৪৯ এএম, ২২ অক্টোবর ২০১৫

মুহাম্মদ জাহিদ রেজা প্রীত। তবে প্রীত রেজা বললেই সবাই চেনেন। বাংলাদেশে ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জনক হিসেবে খ্যাত। স্ত্রী পলা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘ওয়েডিং ডায়েরি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওয়েডিং ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য করছেন সামাজিক আন্দোলন। একক প্রদর্শনী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম পিএএসইও আর্ট ফেস্টিভালে।

ফটোগ্রাফি বিশেষ করে ওয়েডিং ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার নিয়ে জাগো জবসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রাব্বী।

জাগো জবস: প্রথমেই কোন কথাটা শুনবো?
প্রীত রেজা: শোনেন, আমার সবচেয়ে পছন্দের শব্দ হলো ‘না’। এর কারণ হলো- শৈশব থেকে জীবনে এতবার ‘না’ শব্দটি শুনেছি যে, এই ‘না’ শব্দটিই আমার সফলতার চূড়ান্ত মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যেখানে না, সেখান থেকেই প্রতিনিয়ত হ্যাঁ বানানোর চেষ্টা করতে করতেই আজকের প্রীত।

জাগো জবস: কোথায় কোথায় কাজ করেছেন?
প্রীত রেজা: পত্রিকায় প্রদায়ক হিসেবে কাজ শুরু করি। এছাড়াও ফটো এডিটর হিসেবে কাজ করেছি।

জাগো জবস: পত্রিকার ফটোগ্রাফি থেকে ওয়েডিং ফটোগ্রাফিতে কেন?
প্রীত রেজা: সত্যি বলতে কি, পত্রিকায় কন্ট্রিবিউটিংয়ে অর্থনৈতিক চাহিদাটা সেরকম পূরণ হতো না। যেহেতু আগে থেকেই পার্টি, শো ও উৎসব-পার্বণে ছবি তুলতাম। দেখলাম বিবাহ সংশ্লিষ্ট ছবির নান্দনিক উপস্থাপনা একটি ভাল পেশা হতে পারে, সেখান থেকেই ওয়েডিং ফটোগ্রাফি।

pic

জাগো জবস: এখন কোথায় কোথায় যুক্ত আছেন?
প্রীত রেজা: এখন সবার আগে গুরুত্ব দিচ্ছি নিজের প্রতিষ্ঠান ওয়েডিং ডায়েরিকে। আমাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও সময় দিচ্ছি। বর্তমানে ওয়েডিং ডায়েরির সিইও ও প্রধান ফটোগ্রাফার হিসেবে আছি। নিজের ফটোগ্রাফি স্কুলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ফ্যাকালটি হিসেবে কাজ করছি এবং নিজের পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় এটিএন নিউজে ‘ডার্করুম’ নামে একটা শো করছি।

জাগো জবস: আন্তর্জাতিক কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন?
প্রীত রেজা: বর্তমানে ফুজি ফিল্ম, ওয়েডিং অ্যান্ড পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফারস এশিয়ার বাংলাদেশের অ্যাম্বাসাডরসহ প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারস অব আমেরিকা, ওয়েডিং অ্যান্ড পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফার ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব প্রফেশনাল ওয়েডিং ফটোগ্রাফারস, ওয়েডিং অ্যান্ড পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফারস এশিয়া এবং ইপ্লাস ইন্টারন্যাশনালের সদস্যও আমি।

জাগো জবস: বাংলাদেশে সবাই ফার্স্ট ক্লাস টাইপের জব খোঁজে। পরিবারের পক্ষ থেকেও এমনটাই আশা করা হয়। পরিবার, সমাজ ও বন্ধুমহলের এমন চাওয়া কিভাবে সামলেছিলেন?
প্রীত রেজা: চরম বাস্তব কথা বলেছেন। সবাই চায় তার ছেলে বা মেয়েটা অনার্স বা মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের বড় আমলা হোক। এছাড়াও আমি পড়েছি অর্থনীতির মতো একটা সাবজেক্টে। তবে আমি যখন দেখলাম আমাকে আর কিছুতে তেমন টানছে না। আমার দ্বারা সরকারি-বেসরকারি অফিসে ৯টা-৫ টা জব করাটাও হবে না, তখন ভাবলাম কি করা যায়? সবশেষ নিজের পছন্দকেই চাকরিতে রূপান্তরের চেষ্টা করতে করতে আজকের ওয়েডিং ডায়েরি। আর বাধা সে তো পাহাড়সম। অবজ্ঞা তো ছিলোই- যেমন আমি যখন ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ি, তখন আমি ২০ টাকায় ছবি তুলে প্রিন্ট করে দিতাম। আমার বন্ধুরা এটা দেখে বলতো তোর যদি টাকা লাগে তাহলে তুই টিউশনি কর। এমনকি এমনটা করতাম বলে আমাকে অনেকে বন্ধু পরিচয় দিতেই লজ্জা পেত। আর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন থেকেও আলোচনা-সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছি।

জাগো জবস: দেশের বাইরে কোথায় কোথায় ওয়েডিং ডায়েরির ফটোশুট করেছেন?
প্রীত রেজা: নিউইয়র্ক, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত ও মালয়েশিয়ায় ওয়েডিং ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছি।

prito

জাগো জবস: ‘দামি ক্যামেরা বা হাতে একটা ক্যামেরা থাকা মানেই ফটোগ্রাফার নয়’- কেন?
প্রীত রেজা: দেখেন- একজন যখন হুমায়ূন আহমেদ বা অন্য প্রিয় লেখকের লেখা পড়েন, তখন কি ভাবেন তিনি কি কলম বা কত দামি কলম দিয়ে লিখেছেন! তাই বলি- কত দামি ক্যামেরা বা লেন্স দিয়ে ছবি তুললেন সেটার চেয়ে বড় হলো ছবি কথা বলে কিনা বা ভাল কিছু প্রকাশ করে কিনা! যেমন- একবার আমি সিঙ্গাপুরে গেলাম ফটোশুটে। কিন্তু কেনো যেন আমার হাতের দামি ক্যামেরাটা কাজ করছিলো না; পরে হাতে থাকা আইফোন দিয়ে ছবিটা তুলে ফেলি। পরে ঐ ছবিটিই সবার নজর কাড়লো।

জাগো জবস: ওয়েডিং ফটোগ্রাফিতে কী কী বিষয়ে নজর রাখা দরকার?
প্রীত রেজা: ওয়েডিং ফটোগ্রাফির মতো এমন নান্দনিক কাজ ফ্রিল্যান্সার কেউ করুক সেটা আমি পছন্দ করি না। দেখা যায়- কারো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, তিনিই একজন ওয়েডিং ফটোগ্রাফার বনে যান। দিনের বেলা ৯টা-৫টা জব আর রাতে বা ছুটির দিনে বাড়তি আয় হলো, এ মন-মানসিকতা নিয়ে কখনোই শিল্পাঙ্গনে সফল হওয়া সম্ভব নয়।

জাগো জবস: ফ্রিল্যান্স হিসেবে পেশাটিকে নিতে চাইলে আপনার পরামর্শ-
প্রীত রেজা: প্রথমত, কয়েকটা ছবি তুললাম আর টাকা নিয়ে আসলাম- এমন চিন্তা থেকে আমাদের বের হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ছবি তোলাটা একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই সময় দিতে পারবেন বা পেশা হিসেবে নিবেন এমন লোকদের এ পেশায় আসা উচিত। তৃতীয়ত, শুধু দামি ক্যামেরা থাকলেই হবে না; ফটোগ্রাফার হতে চাইলে শুরুতে শিখতে হবে। জানার আগ্রহ ও স্বপ্ন থাকলে অন্যের কথায় কান না দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

জাগো জবস: আপনার সফলতার কারণ হিসেবে কী উল্লেখ করবেন?
প্রীত রেজা: আমি এতটাই কাজ পাগল মানুষ যে, রাতে ঘুমাতে যাব বলে ল্যাপটপটা বন্ধ করার চেষ্টা করি, তখন ভাবি এই মনে হয় আমার পোটেনশিয়ালিটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য বিশ্রাম নেয়াই হয় না। আমার মতে- সফলতা মানে হলো পরিশ্রম। যিনি পরিশ্রম করবেন তিনি সফল হবেনই।

এসইউ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।