রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ১০ জুন ২০২০
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা

মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গৃহীত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে দায়ভার ও দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার নীতি সন্নিবেশিত থাকতে হবে। আর এক্ষেত্রে নিয়মিত মানবিক সহায়তার বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে কোনো কর্তন না করে অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা তহবিল বরাদ্দ দিয়ে বৈশ্বিক মহামারির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এই জরুরি মানবিক প্রয়োজন মেটাতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুন) জাতিসংঘের অন্যতম প্রধান অঙ্গসংস্থা অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) এক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। ২০২০ সালের মানবিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত সেগমেন্টের আওতায় ‘মানবিক প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিষয়ক চ্যালেঞ্জসমূহের ক্রমবর্ধমান জটিলতা নিরসন’ শীর্ষক এ উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, মানবতা ও মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতির স্বীকৃতি স্বরূপ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্ত্যচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ ।

তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পসমূহে কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।

রাবাব ফাতিমা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে খাদ্য, পুষ্টি, পানীয় জল ও স্যানিটেশনের মতো নিয়মিত মানবিক কর্মসূচিসমূহ বিঘ্নহীনভাবে অব্যাহত রাখা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশেষ এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এর সংক্রমণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে, যা দেশের মূল জনগোষ্ঠীর সংক্রমণের হারের চেয়ে কম। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা এবং এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বাংলাদেশ জাতীয়ভাবে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তাতে রোহিঙ্গাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ইকোসকের সহ-সভাপতি মরক্কো উচ্চ পর্যায়ের এই সভায় সভাপতিত্ব করে। জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ ও মানবিক বিষয়াবলীর সমন্বয়কারী, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক ছিলেন আলোচনা পর্বটির মডারেটর। আলোচনা পর্ব শুরুর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতিয়েরেস এ সভায় ভাষণ দেন।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মতো পরিস্থিতি যে কোনো মানবিক সঙ্কটকেই বাড়িয়ে তুলতে পারে। আর তাই, শরণার্থীসহ এ ধরনের মানবিক পরিস্থিতিতে নিপতিত সকলকে জাতিসংঘের মানবিক সাড়াদান সংক্রান্ত বৈশ্বিক পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।

সভায় আরও অংশ নেন নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন মন্ত্রী সিগ্রিড ক্যাগ। তিনি বলেন, প্রথমদিকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি ধনী দেশে আঘাত হানার পরে কোভিড-১৯ এর বিস্তার এখন এমন দেশগুলোতে হচ্ছে যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত নয়, এবং যেখানে দেশগুলো তাদের জনগণকে বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে সংকুলান করতে পারছে না, ক্ষতিগ্রস্থ এসকল দেশে সঙ্কট কাটিয়ে ওঠে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সক্ষমতা বিনির্মাণের বিষয়ে জোর দিতে হবে।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরও বলেন, মানবিক সহায়তা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবধানগুলো অবশ্যই দূর করতে হবে; আর অবশ্যই শরণার্থী ও অভিবাসীসহ তাদের আশ্রয়দানকারী সম্প্রদায়ের সবাইকে টিকাগ্রহণ ও চিকিৎসায় অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে হবে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর কোনো রকম বাড়তি বোঝা চাপানো যাবে না।

মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতি, সাড়াদান ও পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত মানবিক কর্মসূচিসমূহে মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত রাখার ওপর জোর দেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। এ পরিস্থিতিতে লিঙ্গ ভিন্নতা বিশেষ করে নারীরা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

ইকোসকের ২০২০ সালের মানবিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত সেগমেন্টের এই সভায় মানবিক বিষয়াবলী সমন্বয় সংক্রান্ত কার্যালয় (ওচা), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যান্য এজেন্সিসমূহের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাদের এ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম উল্লেখ করার পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারিতে মানবিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তারা যেসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন তা তুলে ধরেন আলোচনায়।

জেপি/এইচএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।