‘করোনার ভয় করলে না খাইয়া মরতে অইব’
মঙ্গলবার, ভোর ৬টা। রাজধানীর কাঁটাবনে পুলিশ বক্সের সামনে বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলেন কয়েকজন রিকশাচালক। ঘুমানোর জন্য তাদের কাঁথা-বালিশ কিংবা বিছানার চাদর কিছুই নেই। জীবিকার বাহন রিকশাটিই যেন তাদের 'ঘুমানোর কক্ষ'।
তাদের একেকজনের ঘুমানোর ভঙ্গি একেক রকম। কেউ সিটের ওপরের অংশে কাত হয়ে মাথা রেখে ও পাদানিতে পা রেখে, কেউ পাদানির নিচে সিট নামিয়ে রেখে ও সিটের ওপরের অংশে মাথা হেলিয়ে দিয়ে আবার কেউবা রিকশার হাতলের সামনে পা ঝুলিয়ে লম্বা হয়ে সিটের ওপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলেন।
ভোরে রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি খুবই কম। তখন এলিফ্যান্ট রোড, বাটা সিগন্যাল থেকে শাহবাগমুখী কিছু গণপরিবহন ও ট্রাক ফাঁকা রাস্তায় উচ্চস্বরে হর্ন বাজিয়ে দ্রুতবেগে ছুটে চলতে দেখা যায়। কিন্তু গাড়ির শব্দে তাদের ঘুম ভাঙে না।
তাদেরই একজন টাঙ্গাইলের কালিহাতীর বাসিন্দা মধ্যবয়সী রমিজ মিয়া। দু চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম ভাঙে তার। কোমরে বেঁধে রাখা গামছা দিয়ে সযত্নে রিকশাটি মুছতে থাকেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রমিজ মিয়া জানান, বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আগের মতো যাত্রী পাওয়া যায় না। আয়-রোজগার কমে গেছে। এখানে যারা ঘুমিয়ে আছেন তারা সারারাত জেগে কারওয়ানবাজার থেকে বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ীর মালামাল আনা-নেয়া করেন। রাত ১২টার পর থেকে ফজরের নামাজের পর পর্যন্ত ভাড়ায় মালামাল নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে এসে রিকশায়ই ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে উঠে দুপুর পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে যা আয়-রোজগার হয় তা নিয়ে বাসায় ফেরেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তাদের মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যাত্রী পরিবহন করতে ভয় লাগে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শাহ আলম নামের একজন বলেন, 'করোনার ভয় করলে না খাইয়া মরতে অইব।' এ কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলেও তিনি সাহস করে বের হয়েছেন বলে জানান।
প্রাতঃভ্রমণে বের হওয়া দুজন প্রবীণ রিকশাচালকদের এভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বলাবলি করছিলেন, নরম বিছানায়ও আমাদের ঘুম আসে না। ঘুমের জন্য ওষুধ খেতে হয়। আর এদের দেখেন, রিকশার মধ্যে এমন বেকায়দায় কেমন আরাম করে ঘুমাচ্ছে। যানবাহনের হর্নের উচ্চ শব্দেও তাদের ঘুম ভাঙছে না।
এমইউ/জেডএ/পিআর