ওয়েবসাইটে লকডাউন জোনের তালিকা, নির্দেশনা নেই মাঠপর্যায়ে
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) তথ্য আপডেট সংক্রান্ত সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের লকডাউন এলাকার তালিকা। ‘গ্রিন, ইয়েলো এবং রেড জোন’- এই তিন ভাগে ভাগ করে তালিকা প্রকাশ করা হলেও এসব জোনের নাগরিকদের জন্য নতুন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা পুলিশের ভূমিকা কী হবে, এ বিষয়েও কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে শনিবার (৬ জুন) রাতে ওয়েবসাইটটিতে সর্বশেষ আপডেট হিসেবে এই তালিকা দেখা যায়। করোনা প্রতিরোধ সহায়ক এই ওয়েবসাইটটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), সরকারের এটুআই প্রকল্প, মন্ত্রিপরিষদ ও আইসিটি বিভাগের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জোনিংয়ের কোনো ঘোষণা না এলেও ওয়েবসাইটে দেশের তিনটি বিভাগ, ৫০টি জেলা ও ৪০০টি উপজেলাকে পুরোপুরি লকডাউন (রেড জোন বিবেচিত) দেখানো হয়েছে। আংশিক লকডাউন (ইয়েলো জোন বিবেচিত) দেখানো হয়েছে দেশের পাঁচটি বিভাগ, ১৩টি জেলা ও ১৯টি উপজেলাকে। আর লকডাউন নয় (গ্রিন জোন বিবেচিত) এমন জেলা দেখানো হচ্ছে একটি এবং উপজেলা দেখানো হচ্ছে ৭৫টি। ঢাকা মহানগরীর ৩৮টি এলাকাকে আংশিক লকডাউন (ইয়েলো জোন বিবেচিত) হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে লকডাউন নয় (গ্রিন জোন বিবেচিত) বলে দেখানো হচ্ছে ১১টি এলাকাকে। ঢাকায় এখন পর্যন্ত পুরোপুরি লকডাউন (রেড জোন বিবেচিত) হিসেবে কোনো এলাকাকে দেখানো হচ্ছে না।
তবে রেড জোন বা ইয়েলো জোনে নাগরিকদের জন্য কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়নি সরকারি এই ওয়েবসাইটে।
ইয়েলো জোনের অন্তর্ভুক্ত এলাকার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) সমমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে অনেকের ফোন পেয়েছি। তবে ইয়েলো জোনে কে কীভাবে চলাফেরা করতে পারবে, দোকানপাট কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এ বিষয়ে নতুন করে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে তিন মাস আগে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, পুলিশ সে অনুযায়ীই কাজ করছে।
ইয়েলো জোনের অন্তর্ভুক্ত আরেকটি এলাকার এএসপি সমমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, সকালে গণমাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে আমার এলাকা ইয়েলো জোনের অন্তর্ভুক্ত। আমার বিভাগের একাধিক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমাকে ফোন দিয়ে নির্দেশনা চেয়েছেন। আমি তাদের আগের নিয়মেই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করে যেতে বলেছি। নতুন করে কোনো নির্দেশনা পাইনি।
কোন জোনে কীভাবে কাজ করা হবে? কোন জোনের লোকজন কীভাবে চলাফেরা করবে? নতুন কোনো নির্দেশনা জারি হয়েছে কি-না, জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেককে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের একটি তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। তবে এটা করা হয়েছে কি-না, আজ সকাল পর্যন্ত আমার কাছে আপডেট নেই। তাই এ বিষয়ে আমি এখনই মন্তব্য করতে পারবো না। আমাকে তালিকা দেখে ও বুঝে মন্তব্য করতে হবে।’
একাধিকবার ফোন করে বন্ধ পাওয়া যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শনিবার (৬ জুন) সর্বশেষ আপডেট করা তালিকা অনুসারে, বরিশাল বিভাগের মধ্যে পুরোপুরি লকডাউন- বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর। এই বিভাগে আংশিক লকডাউন ভোলা ও ঝালকাঠি। চট্টগ্রাম বিভাগে পুরোপুরি লকডাউন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ফেনী, খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী। এই বিভাগে আংশিক লকডাউন বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি।
ঢাকা বিভাগের মধ্যে পুরোপুরি লকডাউন- গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও টাঙ্গাইল। এই বিভাগে শুধু ঢাকা ও ফরিদপুর আংশিক লকডাউন। খুলনা বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, মেহেরপুর, নড়াইল ও সাতক্ষীরা পুরোপুরি লকডাউন। এই বিভাগে আংশিক লকডাউন বাগেরহাট, কুষ্টিয়া ও মাগুরা। খুলনা বিভাগেই দেশের একমাত্র গ্রিন জোন চিহ্নিত জেলা ঝিনাইদহ, অর্থাৎ এটি লকডাউন নয়।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে পুরোপুরি লকডাউন বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহী। এই বিভাগে আংশিক লকডাউন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ। রংপুর বিভাগের আটটি জেলাই পুরোপুরি লকডাউন। জেলাগুলো হলো- দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও।
সিলেট বিভাগের সব ক’টি জেলাও পুরোপুরি লকডাউন। জেলাগুলো হলো- হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট। ময়মনসিংহ বিভাগেরও সব ক’টি জেলা পুরোপুরি লকডাউন। এ চারটি জেলা হলো জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুর।
অন্যদিকে ওয়েবসাইটের তালিকায় ঢাকা মহানগরীর আংশিক লকডাউন বলে চিহ্নিত ৩৮টি এলাকা হলো- আদাবর থানা, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, ওয়ারী, কদমতলী, কলাবাগান, কাফরুল, কামরাঙ্গীরচর, কোতোয়ালি, খিলক্ষেত, গুলশান, গেন্ডারিয়া, চকবাজার, ডেমরা, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, দক্ষিণখান, দারুসসালাম, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, পল্টন মডেল, পল্লবী, বংশাল, বাড্ডা, বিমানবন্দর, ভাটারা, মিরপুর মডেল, মুগদা, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, রমনা মডেল, লালবাগ, শাহআলী, শাহজাহানপুর, শেরেবাংলা নগর, সবুজবাগ, সূত্রাপুর ও হাজারীবাগ থানা এলাকা।
লকডাউন নয় বলে চিহ্নিত ১১টি এলাকা হলো- উত্তরখান থানা, ক্যান্টনমেন্ট থানা, খিলগাঁও, তুরাগ, বনানী, ভাষানটেক, মতিঝিল, রামপুরা, রূপনগর, শাহবাগ ও শ্যামপুর থানা এলাকা।
আইইডিসিআরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ঢাকা জেলায় ২০ হাজার ৭০৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে আক্রান্ত ১৯ হাজার ৩২৭ জন।
ভারতে যেভাবে জোন বিভাজন
ভারতে গত ১৫ এপ্রিল থেকে জেলাগুলোকে মোট তিনটি জোনে ভাগ করে দেয় কেন্দ্র। করোনা নিয়ন্ত্রণে তারা রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনে ভাগ করে।
ভারতের দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, যেসব জেলায় করোনা আক্রান্তের হার অত্যন্ত বেশি, অর্থাৎ ‘হটস্পট’- সেই জেলাগুলোকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বোঝাতে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রেড জোনের কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হয় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ঘরে পৌঁছে দেয় সেবা সংস্থা ও সরকার। এছাড়া এই জোনের অফিসসমূহও বন্ধ রাখা হয়।
সংক্রমণ আছে, কিন্তু হার রেড জোনের তুলনায় অনেক কম, অর্থাৎ হটস্পট নয়, এমন জেলাকে অরেঞ্জ জোনের মধ্যে ফেলা হয়েছে। এই জোনে নাগরিকদের চলাচল সীমিত করে ভারত। সামাজিক দূরত্ব মেনে অফিস ও দোকানপাঠ নির্দিষ্ট সময়ে খোলা ও বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়।
১৪ দিনের মধ্যে যেসব জেলায় নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি তাদের গ্রিন জোনে রাখা হয়। গ্রিন জোনের ফলাফল যদি ভালো না হয় তবে সেই জেলাকে অরেঞ্জ জোনে পাঠানোর নির্দেশনাও দেয়া হয়।
এআর/এইচএ/জেআইএম