করোনা প্রতিরোধে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শনিবার (৩০ মে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য পালনীয় নির্দেশনার চিঠি বাহিনী প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিবি মহাপরিচালক, কোস্টগার্ড মহাপরিচালক, আনসার ও ভিডিপি অধিদফতরের মহাপরিচালক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক, টিএমসির (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) পরিচালকের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব এবং ব্যাপক বিস্তাররোধে সকল পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১৩টি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আবাসিক স্থাপনায় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য দুটি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
গত ২৮ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক আদেশে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ১৫টি শর্ত সাপেক্ষে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে নিষেধাজ্ঞা বর্ধিত করা হয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আলাদা প্রজ্ঞাপনে শর্তসাপেক্ষে দেশের সার্বিক কার্যাবলি ও জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ/সীমিতকরণ করা হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিকে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্য বিভাগের জারি করা ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আলাদাভাবে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আবাসিক স্থাপনায় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি পালনে এক সদস্য থেকে অন্য সদস্যদের কমপক্ষে চার থেকে ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, প্রয়োজনে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ অনুসারে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সরকারের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য প্রতিপালন বা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ না করা এই আইনের অধীনে দণ্ডনীয় অপরাধ। এ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ মোবাইল কোর্ট আইনে তফসিলভুক্ত।
জননিরাপত্তা বিভাগের আওতাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল সদস্যকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা স্বাস্থ্যবিধিসমূহ যথা- সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, দায়িত্ব পালনকালে এবং ঘরে থেকে বের হলে মাস্ক পরিধান করা ইত্যাদিসহ সর্বসাধারণের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয় বলেও নির্দেশনায় বলা হয়।
এমতাবস্থায় জননিরাপত্তা বিভাগের আওতাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করা। একইসঙ্গে মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দিতেও বলা হয় চিঠিতে।
উল্লেখ্য, আজ (শনিবার) শেষ হচ্ছে করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত টানা ৬৬ দিনের ছুটি। এটিই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে লম্বা ছুটি। এ ছুটির অবসানের ফলে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনা সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলছে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামছে গণপরিবহনও (বাস, লঞ্চ, ট্রেন)।
১৫ জুন পর্যন্ত অফিস, গণপরিবহনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হবে এবং কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে, সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২৮ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সড়কে গণপরিবহন চালাচলের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর ১৩টি কারিগরি নির্দেশনা দিয়েছে। অপরদিকে যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচলের বিষয়ে ১৪টি করে ও বিমান চলাচলের বিষয়ে ১০টি কারিগরি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আরএমএম/বিএ/জেআইএম