১৬ মাস পরেও সংসদের ফ্ল্যাটের কাজ অর্ধেক বাকি
জাতীয় সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪ সালের জুন মাসে। এরপর ১৬ মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো প্রায় অর্ধেক কাজ বাকি।
অবশ্য সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন প্রকল্পের ৬৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কিন্তু আদৌও তা সম্ভব হবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ শুরুতে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে গেলেও ধীরে ধীরে তা কচ্ছপ গতিতে রূপ নিয়েছে। আর ব্যয় বাড়ছে ভৌতিক হারে।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৮৪৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংসদকে জানানো হয়, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৬ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১১ সালে প্রকল্প প্রণয়নের সময় ব্যয় বরাদ্দ ছিলো আরো কম।
রাজধানীর শেরে বাংলানগরে এই প্রকল্পের আওতায় ১৫ তলা বিশিষ্ট ৮টি ভবনে মোট ৪৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। তার মধ্যে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুটের ৫৬টি, ১ হাজার বর্গফুটের ১১২টি, ৮০০ বর্গফুটের ১১২টি এবং ৬০০ বর্গফুটের ১৬৮টি ফ্ল্যাট থাকবে। যার প্রায় অর্ধেকের কাজ এখনো বাকি রয়েছে । সরেজমিনে পরিদর্শনে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও সাবেক স্পিকার মো. আবদুল হামিদের বিশেষ উদ্যোগে জাতীয় সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে এই ফ্ল্যাট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) ২০১২ সালের ৯ জুলাই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এরপর ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি স্পিকার মো. আবদুল হামিদ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রথমে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু অর্থ বরাদ্দে বিলম্ব হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ৬ মাস বাড়িয়ে ২০১৪ সালের জুনে শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। শুরুতে নিয়মিত তদারকিতে এই কাজে গতি থাকলেও স্পিকার আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর কাজে ধীর গতি চলে আসে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের জন্য ১১ হাজার ৭০৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ছাড় দেওয়া হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সোমবার দুপুরে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি প্রকল্পটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। তবে সেখানে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও তাদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি তিনি।
পরে জাতীয় সংসদের গণসংযোগ শাখার পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ওই ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন হলে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যার সমাধান হবে বলে স্পিকার আশা প্রকাশ করেছেন। পরিদর্শনকালে স্পিকার প্রকল্প এলাকায় কমিউনিটি সুবিধা বৃদ্ধিসহ ডে-কেয়ার সেন্টার তৈরিরও পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ৮টি ভবনের একটিরও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। একটির গাঁথুনি সবে শুরু হয়েছে। তিনটি ভবনের শুধু ইটের গাঁথুনি শেষ হলেও, শেষ হয়নি প্লাস্টারের কাজ। ভবনগুলোতে গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা রাখা হয়নি। নেই কোন খোলা জায়গা। প্রকল্প এলাকার রাস্তাঘাট, পানি, বিদ্যুৎসহ আনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে আগামী জুনে কাজ শেষ করে কিভাবে তা হস্তান্তর করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এইচএস/এসকেডি/পিআর