সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত অনুমোদন
চূড়ান্ত অনুমোদন পেলো উন্নয়নের কৌশলপত্র সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। ২০১৫ থেকে ২০২০ এই পাঁচ বছরের জন্য এই পরিকল্পনা। এতে বাৎসরিক গড় প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ৩২ লাখ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশনের কনফারেন্স কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) এর সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ এর চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম সভায় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন।
সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের কাছে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন। এসময় তিনি বলেন- প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ, সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র নিরসন এর সাথে প্রত্যেক নাগরিকের যাতে ক্ষমতায়ন হয় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ বিষয়গুলোকেই তুলে ধরা হয়েছে। এজন্যই এবারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রতিপাদ্য হলো ‘প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ, নাগরিকের ক্ষমতায়ন’।
তিনি আরো বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং জনগণের আয় বন্টন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য হারে উন্নীতকরণের লক্ষ্য অর্জনের উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে অন্যতম কৌশল হবে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগে গতিশীলতা আনা। একইসাথে সর্বাধিক কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা।
ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারের মাধ্যমে মূলধন ও শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, রফতানিমুখী বাণিজ্য ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ এবং সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি টেকসই , সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জলবায়ু সহিষ্ণু ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।
মুস্তফা কামাল বলেন,‘ এবারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এর মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে এটি প্রণয়ন করা হয়েছে’।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন,‘ এবারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গড়ে ৭ দশমিক ৪ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দারিদ্রের হার বর্তমানের ২৪ দশমিক ৮ ভাগ থেকে কমিয়ে ১৮ দশমিক ৬ ভাগে আনা হবে। রফতানি আয় ৩০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২০ সালে ৫৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণের লক্ষমাত্রা ঠিক করা হয়েছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপি’র ২ দশমিক ০২ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ২০২০ সালে জিডিপি’র ২ দশমিক ৩০ ভাগে উন্নীত করা হবে। একইসাথে এবারের পাঁচ বছরে ১ কোটি ২৯ লাখ কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছি’।
এবারই প্রথম গবেষণা কার্যক্রমকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গবেষণা ব্যয় জিডিপি’র ০ দশমিক ৬ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ১ ভাগে উন্নীত করা হবে’।
মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৫-১৬ অর্থবছরকে ভিত্তিধরে এবারের পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় ৩১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে। মোট বিনিয়োগের ৭৭ দশমিক ৩ ভাগ আসবে বেসরকারি খাত থেকে। বাকি ২২ দশমিক ৭ ভাগ আসবে সরকারি খাত থেকে।
বিনিয়োগকৃত অর্থের উৎস নিয়ে আহম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘মোট বিনিয়োগের ৯০ দশমিক ৪ ভাগ অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে আহরণ করা হবে। বাকি ৯ দশমিক ৬ ভাগ বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো বলেন, ‘মোট বিনিয়োগ বর্তমানে জিডিপি’র ২৮ দশমিক ৯ ভাগ থেকে ২০২০ সালে জিডিপি’র ৩৪ দশমিক ৪ ভাগে উন্নীত করতে হবে। একইসাথে মূল্যস্ফিতী ২০২০ সালে ৫ দশমিক ৫ ভাগে কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য ২০২০ সাল নাগাদ রাজস্ব ও জিডিপি’র অনুপাত আজকের ১০ দশমিক ৮ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত করতে হবে’।
অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এর নেতৃত্বে প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিদদের সমন্বয়ে গঠিত ‘অর্থনীতিবিদ প্যানেল’ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিলের ধারণাপত্র প্রণয়ন করেন এবং পরিকল্পনামন্ত্রীর সভাপতিত্বে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি এ ধারণাপত্র অনুমোদন করে। এ ধারণাপত্রের আলোকে খাত ও উপ খাতভিত্তিক ৩০টি গবেষণাপত্র এবং প্রয়োজনীয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক মডেল প্রণয়ন করে।
এর উপর ভিত্তি করে ৫৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নিয়ে দলিল তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত গ্রহণ করে পরিকল্পনা দলিলের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।
এসএ/এসএইচএস/আরআইপি