খরচের ধাক্কা সামলাতে না পেরে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে!
রাজধানীর লালবাগের আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের সামনে দিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে একটি ভ্যান গাড়ি যাওয়ার সময় পথচারীরা সবাই তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিল। ভ্যান গাড়িটিতে দুটি কাঠের চৌকি, একটির ওপর আরেকটি রাখা। ওপরের চৌকিতে বসে আছেন আপাদমস্তক কালো রঙের বোরকা পরিহিত একজন নারী। নিচের চৌকিতে বসে আছে দুটি শিশু। সেখানে বসে ওরা উঁকিঝুঁকি মেরে রাস্তার দৃশ্য দেখছিল। এ দৃশ্য দেখে রাস্তার একজন পথচারী টিপ্পনী কেটে মন্তব্য করলেন, ‘মহারানি আর রাজপুত্রদের নিয়ে শহর দেখতে বাহির হইছ নাকি? একথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললেন ভ্যানচালক।’
কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক ভ্যানচালকের নাম, পরিচয় ও এভাবে চৌকি নিয়ে তারা কোথায় যাচ্ছেন চাইলে তিনি বলেন, ‘তার নাম সিরাজুল ইসলাম। পেশায় একজন রিকশাচালক। তার স্ত্রী রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে ইস্টার্ন মল্লিকার সামনে একটি বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। ওই বাসার গৃহকর্তা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে ছোটখাটো চাকরি করতেন। একার আয়ে সংসার চালাতে না পেরে তিন রুমের একটি রুমে চৌকি পেতে বাসায় ব্যাচেলর ভাড়া দিয়েছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ভাড়াটে ব্যাচেলররা দুই মাস আগেই বাসা ছেড়ে গ্রামে চলে যান। আয় রোজগার কমে যাওয়ায় গৃহকর্তা বিপাকে পড়ে যান। পরিস্থিতির উন্নতি হবে ভেবে এ মাস পর্যন্ত কোনোভাবে সংসার খরচ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আপাতত তিনিও বাসায় তালা মেরে গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।’
‘এ কারণে আজ তার স্ত্রীকে ডেকে বলেন, আপাতত বেতনের টাকা হাতে নেই-একথা বলে চৌকি দুটি নিয়ে যেতে বলেন। চলে যাওয়ার সময় বলে গেছেন, যদি পরিস্থিতির উন্নতি হয় তবে ফিরে এসে আবার তাকে কাজে রাখবেন এবং পাওনা বেতন পরিশোধ করবেন।’
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে রাজধানীতে বাসাভাড়া ও সংসার খরচ চালিয়ে টিকে থাকা অনেকের জন্য দায় হয়ে পড়েছে। ছোটখাটো চাকরি বা ব্যবসা করে যারা ঢাকা শহরে সংগ্রাম করে এতদিন কোনোরকমে টিকে ছিলেন, তারা চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। আয় না থাকলেও কিংবা সীমিত আয় দিয়ে সংসার চালানো অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে অনেকেই বাসা ছেড়ে গ্রামে পাড়ি দিচ্ছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তার আবার ফিরে আসবেন বলে জানাচ্ছেন।
রাজধানীর বকশিবাজারের একটি বাড়ির মালিক জানান, তার ছয়তলা বাড়ির পুরোটাই ব্যাচেলরদের ভাড়া দিয়েছিলেন। তারা কেউ চাকরি কেউ ব্যবসা কেউবা হকারি করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই মাসে সব ভাড়াটিয়া গ্রামে চলে গেছে। এ সময়ে বাসাভাড়া বাদ একটি টাকাও পাননি বলে তিনি জানান। হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতিতে পড়বেন তা কখনও কল্পনাও করেননি ওই বাড়ির মালিক।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তাদের মতো নগর বাসিন্দাদের মধ্যে অস্থিরতা ও অস্বস্তি বিরাজ করছে।
এমইউ/এসআর/এমএস