ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:৪৪ পিএম, ২১ মে ২০২০

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে সৃষ্ট ঝড়, দমকা হাওয়া ও অতি বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বোরো ধান, পাট, তরিতরকারি, আম, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ও ভুট্টাসহ কৃষির ব্যাপক ক্ষতির কারণে কৃষকরা এখন খুব চিন্তিত। এমনিতেই করোনার কারণে সারাদেশের কৃষক উৎপাদিত কৃষি পণ্যের দাম পাননি। এর ওপর আম্ফানে কৃষকের জন্য ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো অবস্থা হয়েছে।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার চরপাড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আকিমুদ্দিন শেখ জাগো নিউজকে জানান, বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি ও ঝড়ে বোরো ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ঝটকা ও দমকা হাওয়ায় ধানের শীষ থেকে অনেক ধান ঝরে পড়ে গেছে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য অনেক কৃষক নতুন করে তরিতরকারি আবাদ করেছিলেন। ঝড় ও অতি বৃষ্টির কারণে তরকারির গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পটল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কাঁকরোলসহ বিভিন্ন তরকারির গাছ ঝড়ে ছিঁড়ে গেছে। নরম ডগা ভেঙে গেছে। বিশেষ করে যারা ভুট্টা চাষ করেছিলেন তাদের ভুট্টা গাছ মাটিতে নুয়ে গেছে। এই ভুট্টার ফলন হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধা, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, পাবনায়ও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় বৃষ্টি ও ঝড়ে বোরো ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ঝটকা ও দমকা হাওয়ায় ধানের শীষ থেকে অনেক ধান পড়ে গেছে। তরিতরকারিরও ক্ষতি হয়েছে। অনেক ক্ষেতে অতিরিক্ত পানি জমে গেছে। এসব ক্ষেতের গাছ মরে যাবে।

crops

জাগো নিউজের রাজশাহীর প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে রাজশাহী ছাড়াও নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ থেকে পড়ে গেছে বেশিরভাগ আম। বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অন্যান্য কৃষি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহীতে প্রায় ২০ ভাগ আম গাছ থেকে পড়ে গেছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার দিবাগত রাত ২টা ৫৫ মিনিটে আম্ফান প্রবেশ করে এই অঞ্চলে। তখন বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। বাতাসের এই গতিবেগ ছিল মাত্র তিন মিনিট। এরপর ধীরে ধীরে কমে আসে বেগ।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, আম্ফানের যে গতিবেগ ছিল তা রাজশাহী পৌঁছার আগেই দুর্বল হয়ে পড়ে। ঝড় হিসেবেই রাজশাহী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রবেশ করে আম্ফান। এর স্থায়িত্ব ছিল আধা ঘণ্টার মতো। এর প্রভাবে রাজশাহী অঞ্চলে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সেইসঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতও হয়।

crops

আম্ফানে রাজশাহীতে আমের ব্যাপক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক হামিদুল হক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার (২০ মে) উপকূলে আঘাত হানার কারণে উপকূলের সবগুলো জেলায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকায় কৃষি ফসল ছাড়াও হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুধু ফসলেরই ক্ষতি হয়নি, ঘর-বাড়ি গাছ-পালা ভেঙেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে উপকূলীয় জেলায় শিশুসহ অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ও তিনজন আহত হন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বৃহস্পতিবার (২১ মে) অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে আহত ও নিহতদের প্রতিবেদন দিয়ে এ তথ্য জানান।

crops

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাশেদ ইফতেখার এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে জানান, মাঠ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও পুরোটা আসেনি। তবে ঝড়ে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আজ সন্ধ্যা নাগাদ ক্ষয়ক্ষতির একটি চিত্র পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, ঝড়ের আগেই সারাদেশে ৭১ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। মাঠে থাকা বাকি ধানের কিছু ক্ষতি হয়েছে।

এফএইচএস/জেডএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।