গাজীপুরের প্রকৌশলী খুন, স্বজনদের দাবি অফিসের সহকর্মীরা জড়িত

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৯:১৫ পিএম, ১৮ মে ২০২০

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৭ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেনকে (৫০) টেন্ডার সংক্রান্ত কারণে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবার।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একজন প্রকৌশলী ও গাড়িচালকসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে আটকদের পরিচয় জানাতে চাচ্ছে না পুলিশ।

এদিকে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন খুন হওয়ার পর রোববার গাজীপুর সিটি কপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নিহত প্রকৌশলীর মিরপুরের বাস ভবনে যান। সেখানে তিনি নিহত দেলায়ার হোসেনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন।

তিনি এ খুনের সঙ্গে জড়িতদের খোঁজে বের করে দ্রুত বিচারের দাবি জানান। এ সময় তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

jagonews24

এ খুনের রহস্য উদঘাটনে মাঠে কাজ করছে পুলিশ, র্যাব, পিবিআই ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্তকারী দলের এক কর্মকর্তা জানান, টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে থাকতে পারে।

আর এর বাইরে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রেখেও তদন্ত করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, খুনিরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে খুনের পরিকল্পণা করে। এবং তাদের পরিকল্পণা মতেই খুন হন প্রকৌশলী দেলেয়ার হোসেন।

নিহতের বড়ভাই নুরুন নবী বলেন, আমার ছোটভাই অত্যান্ত সরল জীবনযাপন করতো। অফিসের বাইরে তার ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা ছিলনা। গ্রামের বাড়িতে এক দুই বছর পর যেত সেখানে এক-দুই দিন থেকে আবার চলে আসতো। তাই ওখানেও আমাদের কোনো শত্রু নেই। গত ছয় মাস আগে দেলোয়ার তার (নুরুন নবীর) ছেলেকে বলেছিল সে আর চাকরি করবে না। এতো চাপ সহ্য হয় না। অনেক সময় তাকে মোবাইলে ফোন করে চাপ প্রয়োগ করা হতো। পরে সে বলতো আমার দ্বারা সম্ভব নয় আপনারা উপরে যোগাযোগ করে পারলে নিয়ে যান।

তার অফিসে শত কোটি টাকার টেন্ডারের বিলের ফাইল নিয়ে একটি মহল ঝামেলা সৃষ্টি করছে।অফিসের এক সহকর্মী তার সঙ্গে সব সময় লেগে থাকতো। চাকরি ছেড়ে আমার সঙ্গে ব্যবসা করতে চেয়ছিল। সে একজন বড় প্রকৌশলী হয়েও তার কোনো জমি, ফ্ল্যাট ও গাড়ি ছিল না।

তিনি জানান, ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে যোগদানের পর তিন মাস তাকে চেয়ারে বসতে দেয়নি। গত বছর অক্টোবর মাসের দিকে তাকে গাজীপুর সিটি কপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা এ খুনের রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে। আশা করছি শিগগিরই খুনিরা ধরা পড়বে। আমরা এর বিচারের অপেক্ষায় রইলাম।

jagonews24

তিনি আরও জানান, তার ভাই দেলোয়ার হোসেনের খুনের সঙ্গে অফিসের লোকজনই জড়িত। অন্যায়ভাবে তাকে সাত মাস ওএসডি করে রাখা হয়েছিল।

নুরুন নবী বলেন, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ গত ১১ মে দুপুর বারোটার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে তার অফিসে যাওয়ার কথা ছিল। তাকে নিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি আসার কথা ছিল। কিন্তু সকাল নয়টার দিকে অন্য একটি গাড়ি চলে আসে। গাড়ির চালক বা গাড়িতে থাকা অন্য কেউ ছোট ভাইকে ফোন করে জানায়, গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য ওই প্রাইভেট কোম্পানির গাড়িটি আজ আসবে না। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে আজ একটু আগে অফিসে যেতে হবে। এমন কথার প্রেক্ষিতে সে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। দুপুর আড়াইটার দিকে গাজীপুরের অফিস থেকে বাসায় ফোন করে তার ছোট ভাইয়ের অফিসে না যাওয়ার কারণ জানতে চায়। তার শরীর খারাপ কিনা বা অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা তাও জানতে চায়।

বাসা থেকে যথারীতি সে সকাল সাড়ে নয়টায় বেরিয়ে অফিসের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে জানানো হয়। এরপর তার মোবাইলে একের পর এক ফোন করা হয়। মোবাইল ফোন বন্ধ। এরপর আমরা থানায় গিয়ে জিডি করি। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

jagonews24

গাজীপুর সিটি কর্পোশেনের আঞ্চলিক কার্যালয়-৭ এ গেলে এ বিষয়ে কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন ভালো লোক ছিলেন। অন্যায় তদবির ও অন্যায় কাজকে তিনি পছন্দ করতেন না। যার কারণে অনেকে তার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে ক্ষুব্ধ ছিল। এজন্য তাকে খুন করতে হবে সেটা তারা মেনে নিতে পারছেন না।

প্রকৌশলী দেলোয়ারের ওপর কি ধরনের, কোন প্রকল্পের এবং কাদের চাপ ছিল সে বিষয়টির ব্যাপারেও কেউ কিছু বলতে পারছেন না।

এদিকে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার স্ত্রী খোদেজা বেগম বাদী হয়ে রাজধানীর তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত খুনিদের আসামি করা হয়েছে।

তুরাগ থানা পুলিশের এসআই মো. শফিউল আলম মামলাটি তদন্ত করছেন। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ইতোমধ্যেই তার বাসা, বাসার আশপাশের লোকজন ও তার দফতরের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে অনেককে। তবে খুব শিগগিরই হত্যা রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, তাকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারীরা অনেক দিন ধরেই তাকে নজরদারির মধ্যে রেখেছিল। গাড়িতে উঠার পর আধাঘণ্টা বা একঘণ্টার মধ্যেই তাকে অপহরণ এবং পরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এ হত্যাকান্ডের নৈপথ্যে ও নানাভাবে যারা যুক্ত আছে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীর মধ্যে রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ঘাতকরা ধরা পড়তে পারে।

আমিনুল ইসলাম/এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।