জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫৮ পিএম, ১৭ মে ২০২০

বীর মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান, সাবেক এম এন এ অধ্যাপক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মমতাজ বেগম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শনিবার (১৬ মে) দিবাগত রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় গ্রীণ রোডের পাশে নর্থ রোড (ভূতের গলি) তার নিজ বাসভবনে তিনি মারা যান।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক তার মৃত্যুর সংবাদটি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, অধ্যাপক মমতাজ বেগম বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্বামী, এক মেয়ে, এক ছেলে, আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মানিক বলেন, তিনি বাংলাদেশ বার কউন্সিলের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান স্যারের সহধর্মিণী এবং অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা পিউলির মা।

১৯৪৬ সালের ১৩ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করা এই বীর নারীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার।

প্রধানমন্ত্রী এক শোক বিবৃতিতে মমতাজ বেগমের পবিত্র রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারী সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী জাগরণের অগ্রপথিক একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মমতাজ বেগমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গভীরভাবে শোকাহত। নারীর শিক্ষা ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে অধ্যাপক মমতাজ বেগমের অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন শোক প্রকাশ করে মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানান। সুপ্রিম কোর্ট বারও শোক প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছাত্রজীবনের সংগ্রামী কর্মকাণ্ডের নিকটতম সঙ্গী ছিলেন মমতাজ বেগম। স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি তৈরির কাজে এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী সরকারের ভেতরে থেকে নেতৃত্ব দেন এই বীর নারী।

mamtaj1

১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ ভর্তি হন মমতাজ। সেসময় স্নাতক – সম্মান কোর্সের ছাত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পা দেয়ার আগে মমতাজ ছিলেন কুমিল্লা মহিলা কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। আর অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। ফলে এই দুই সংগ্রামী নেত্রী একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আন্দোলনকে চাঙ্গা করে তোলেন। তারাই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যান মমতাজ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বাড়ি মরিচা হাউসে নারীদের সামরিক ও প্রাথমিক পরিচর্যার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন মমতাজ। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগরতলায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী – বিএসএফ’এর সদর দফতরে অস্ত্র চালনা এবং যুদ্ধ পরিচালনার ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এসব বিষয়ে অন্যান্যদের নানা স্থানে প্রশিক্ষণ প্রদানও করেন তিনি। ২৫ মার্চ রাত থেকে শুরু হওয়া পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংস হামলা ও নির্যাতনের শিকার নারীদের সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব ছিল তার ওপর। ‘মহিলা সংঘ’ নামে একটি সেবা সংগঠনের মাধ্যমে শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ এবং উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করেন তিনি।

এমনই অসংখ্য করুণ পরিস্থিতি পেরিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ছিনিয়ে আনেন মমতাজের মতো বীর নারী-পুরুষ। স্বাধীনতার পরও থেমে যাননি মমতাজ। চালিয়ে গেছেন দেশ ও জাতি গড়ার কাজ। অধ্যাপনা, রাজনীতি এবং আইন পেশার সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের ১২ মার্চ থেকে দায়িত্ব পালন করে করছিলেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে।

মরহুমার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৭ মে) বাদ যোহর ঢাকার নর্থ রোড (ভূতের গলি)জামে মসজিদে জানাজা শেষে ঢাকায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

এফএইচএস/এইচএস/এফএইচ/জেডএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।