সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের বিনামূল্যে সেবা দেবেন বাংলাভাষী চিকিৎসক
সিঙ্গাপুরে প্রায় দেড় লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির বাস। রোগে আক্রান্ত হলে ভালোভাবে ইংরেজি না জানার কারণে অনেক সময়ই তারা নিজেদের সমস্যাগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারেন না। করোনার সময়ে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বাংলাভাষী চিকিৎসক ও বিদেশি চিকিৎসকের সমন্বয়ে বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে চীনভিত্তিক বর্ডারলেস হেলথকেয়ার গ্রুপ। প্রথমে সিঙ্গাপুরে বসবাসরত বাংলাদেশি শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে এই সেবা প্রদান করা হবে। তারপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সেবা চালু করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) এই অনলাইন সেবার উদ্বোধন করেন বর্ডারলেস হেলথকেয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. ওয়েই সিয়ান ইউ।
১৪ মে থেকে এর নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধনকারীদের মাঝে আগামী ৩০ মে কোভিড-১৯ পারদর্শী ও বাংলাভাষী চিকিৎসকদের আয়োজনে প্রথম স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে। এই স্বাস্থ্যসেবা বাংলা ও বার্মিজ ভাষায় প্রদান করা হবে। বর্ডারলেস ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করা যাবে। এখন থেকে সবসময় এই সাইটে গিয়ে নিবন্ধন করে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন সিঙ্গাপুরের প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এ বিষয়ে বর্ডারলেস হেলথকেয়ার গ্রুপের বাঙালি অভিবাসী শ্রমিকদের সমন্বয়ক বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ শরফুদ্দিন রেজা আলী চৌধুরীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথমে আমরা সিঙ্গাপুর নিয়ে কাজটা শুরু করছি। অভিবাসীরা ডাক্তারদের কাছে নিজেদের কাছে সমস্যাগুলো ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে না। কারণ তারা ভালোভাবে ইংরেজি জানেন না। মাতৃভাষায় তুলে ধরতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। করোনার সময় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। বাংলাদেশি চিকিৎসক এবং বিদেশি করোনা বিশেষজ্ঞরা মিলে বাংলা ভাষায় শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদান করবে। ধরেন, শ্রমিকরা তাদের সমস্যাগুলো বাংলা ভাষায় বলল, একজন ডাক্তার বাংলা ভাষায় শুনলেন এবং বাংলা ভাষা জানা চিকিৎসক ও বিদেশি চিকিৎসক মিলে সেই রোগের সমাধান দেবেন। মূলত এটাই হচ্ছে আমাদের উদ্যোগ।’
কীভাবে এ সেবা দেয়া হবে তা তুলে ধরে শেখ শরফুদ্দিন রেজা আলী চৌধুরী বলেন, ‘সিঙ্গাপুরেই প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। আর বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতোই প্রবাসী শ্রমিকদের মতো সিঙ্গাপুরের অবস্থানরত প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই ডরমেটরিতে থাকে। সেই ডরমেটরির যে টেলিভিশন আছে, সেটার মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমরা ফ্রি চিকিৎসাসেবা প্রদান করব। টেলিভিশনগুলোর মাধ্যমে যেন ভিডিও কনফারেন্স করা যায়, সে জন্য ডরমেটরির মালিকরা সহযোগিতা করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শ্রমিকরা প্রথমে নিবন্ধন করবেন। এরপর ডাক্তারদের মাঝে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট যাবে। চিকিৎসক ও সেবা প্রার্থীর সুবিধামতো সময় নির্ধারণ করে। ওই সময় ডাক্তাররা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের বিনামূল্যে সেবাটা প্রদান করবে। আগামী ৩০ মে থেকে আমরা এই কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করতে যাচ্ছি। তবে এই সেবাটা যেহেতু আজীবন দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাই নিবন্ধনও এখন থেকে যেকোনো সময় করা যাবে।’
সবাইকে এই সেবা প্রদান করা হবে জানিয়ে শেখ শরফুদ্দিন রেজা আলী চৌধুরী বলেন, ‘সবাইকেই আমরা এই সেবা দেব। তবে প্রথম দিকে শুধু শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের এই সেবা প্রদান করব। পরবর্তীতে এটা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেব। এটা শুধু করোনার জন্য নয়। করোনার এই সময়ে সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের যেকোনো রোগে এই সেবা প্রদান করব। করোনা চলে গেলেও পরবর্তী সময়ে প্রবাসীদের সবধরনের অসুখের জন্য এই সেবা চালু থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সিঙ্গাপুর দিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি। বিশেষ করে বাংলাদেশি ও অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের। যেহেতু এটা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড প্লাটফর্ম, সারাবিশ্বেই এটা করার পরিকল্পনা আছে। সিঙ্গাপুরের পর অন্য দেশগুলোতে এই সেবা চালু করার চেষ্টা করব।’
পিডি/বিএ