শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামী ভ্রাতৃত্ব


প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

সমগ্র মুসলিম মিল্লাত এক প্রাণ, এক দেহ, একই চেতনাবোধে বিশ্বাসী। ইসলামের অপরিহার্য বিধানকে উপেক্ষা করায় মুসলিম মিল্লাত আজ শতধাবিভক্ত। মুসলিম উম্মাহ আজ পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, নিন্দাবাদের ঘৃণ্য কাঁদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত। এ কারণেই মুসলিম বিশ্বে অশান্তি দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায়ই হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে জোরদার করা। যার নির্দেশ কুরআন ও সুন্নার অসংখ্য জায়গায় এসেছে। জাগো নিউজে তা তুলে ধরা হলো-

কুরআনে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য
শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামে ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক আয়াত ও হাদিসে জোর তাগিদ দিয়েছেন। অল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১০)

একত্ববাদে বিশ্বাস তথা ঈমান আনয়ন করার পর মুমিনদেরকে যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাগিদ দেয়া হয়েছে তা হলো একতাবদ্ধ হওয়া। সংঘবদ্ধতা সর্ম্পকে আল্লাহ ইরশাদ করেন, তোমরা সেইসব লোকদের মত হয়ো না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরণের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৫)

আল্লাহ আরো বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, সালাত কায়েম কর এবং কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের দ্বীনকে টুকরো করে দিয়েছে এবং নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হয়েছে এদের প্রত্যেকটি দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়েই মত্ত।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৩১-৩২)

আল্লাহ তাআলা তাঁর বিধানকে জড়িয়ে ধরায় মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যের শিক্ষা দিচ্ছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)

যারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে কুরআনে বক্তব্য জানে, তাদের ব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে,  ‘নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে বেশি ভালোবাসি যারা আল্লাহর রাস্তায় এমনভাবে সারিবদ্ধ হয়ে লড়াই করে, ঠিক যেন শিষাঢালা এক সূদৃঢ় প্রাচীর।’ (সুরা সফ : আয়াত ৬১)

হাদিসে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য
হাদিসে নববিতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনগণ একজন মানুষের মতো, যার চোখ আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীর আক্রান্ত হয় আর তার মাথা আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীর আহত হয়।’ (মুসলিম)

হযরত হারিছ আল আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি, স্বয়ং রব আমাকে এগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়গুলো হচ্ছে- ১. সংঘবদ্ধ হওয়া, ২. আমিরের নির্দেশ শ্রবণ, ৩. আমিরের নির্দেশ পালন, ৪. হিজরত, ৫. অল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধতা ত্যাগ করে এক বিঘৎ পরিমাণ দূরে সরে যায়, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেলেছে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সালাত কায়েম এবং সাওম পালন করা সত্ত্বেও? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,  নামাজ কায়েম এবং  রোজা পালন এবং মুসলমান বলে দাবি করা সত্ত্বেও।` (তিরমিজি)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি মুমিনদের দেখবে একটি দেহের মতো। যদি দেহের কোন একটি অংশ আহত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে।` (বুখারি)

ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করতে ঐক্যের বিকল্প নেই। মুসলিম উম্মাহ যখনই ঐক্যবদ্ধ জীবন থেকে সরে দাঁড়ায়, শয়তান সে স্থান দখল করে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন-যাপন কর, সংঘবদ্ধ থাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন যাপন কর না, কারণ বিচ্ছিন্ন হলে শয়তানের কুপ্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।’ (আবু দাউদ)

তিনি আরো বলেছেন,‘মুমিনগণ অপর মুমিনের জন্য একটি প্রাচীরের মতো, যার এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনিএক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুলে প্রবিষ্ট করেন।` (বুখারি)

তাইতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে দিয়েছেন নেতৃত্বহীন থাকা থেকে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিনজন লোকও যদি কোনো নির্জন প্রান্তরে থাকে। তবে একজনকে আমির বা দলনেতা সাব্যস্ত কর।’ (মুসনাদে আহমাদ)

পরিশেষে...
হজরত ওমর ও ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিস দিয়ে শেষ করতে চাই। ইবনে ওমর থেকে বর্নিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু (নাউজুবিল্লাহ)। (মুসলিম) হে আল্লাহ! আপনি সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আপনার দ্বীনকে জমিনে প্রতিষ্ঠা করার তাওফিক দান করুন। হজরত ওমর থেকে বর্ণিত রাসুলে আরাবির হাদিস, ‘যে ব্যক্তি জান্নাতের সর্বোত্তম অংশে বসবাস করে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে। (তিরমিজি) আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ হাদিসের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]

জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।