‘জীবিতের চেয়ে মৃতই শক্তিশালী, অন্তত রিপোর্টটা দ্রুত মেলে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১২:১৭ এএম, ০৫ মে ২০২০

বেঁচে থাকতে বারবার অনুরোধ করেও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) থেকে রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট না পাওয়ায় নগরের কোনো হাসপাতালেই ভর্তি হতে পারেননি প্রবাসফেরত সেকান্দার হোসেন। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর পর মাত্র ১৫ ঘণ্টার মাথায় সেই রিপোর্ট পেয়েছেন স্বজনরা, তিনি করোনা পজেটিভ।

সোমবার (৪ মে) রাত ১১টার দিকে রিপোর্ট পেয়ে মৃতের শ্যালক সালমান ফারুকী বললেন, ‘জীবিতের চাইতে মৃতই শক্তিশালী, অন্তত রিপোর্টটা তাড়াতাড়ি মেলে’

সালমান মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই রিপোর্ট দিয়ে আমরা এখন কী করব? যে রিপোর্টের কারণে মানুষটিকে হাসপাতালে ভর্তি নেয়নি। যে রিপোর্টের কারণে মানুষটি চিকিৎসা পাননি। সে রিপোর্ট দিয়ে আমরা কী করব?’

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এনায়েত বাজারের ওই ব্যক্তির রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তাই তার পরিবারের বসবাস করা ভবনটি লকডাউন করা হয়েছে। এখন স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আমাদের দেয়া নির্দেশনা মেনে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হবে’।

এর আগে, সোমবার সকালে জ্বর-শ্বাসকষ্ট ভুগে বিনা চিকিৎসায় বন্দরনগরের এনায়েত বাজার এলাকার বাসিন্দা প্রবাসফেরত সেকান্দার হোসেনের মৃত্যু হয়। ওই রোগীর স্বজনরা গত ১৫ দিন চেষ্টা করেও প্রবাসী সেকান্দারকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারেননি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে চট্টগ্রামে করোনার জন্য ডেডিকেটেড জেনারেল হাসপাতালেও যোগাযোগ করেন এই প্রবাসীর পরিবার। দেন তার নমুনা। কিন্তু করোনার সব উপসর্গ থাকার পরেও হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় অবস্থানের পরামর্শ দেয়া হয়।

অন্তত হাসপাতালে ভর্তির সুযোগের জন্য তার স্বজনরা তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পেতে বেশ চেষ্টা চালায়। কিন্তু সিভিল সার্জন দফতর থেকে জানানো হয় অন্তত এক সপ্তাহের আগে রিপোর্ট পাওয়া যাবে না।

এই অবস্থাতেই শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে আজ সকালে সেকান্দারের মৃত্যু হয়। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যে রিপোর্ট সাতদিনের আগে না পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল, মারা যাওয়ার পর সে রিপোর্ট মিললো দিনের দিনেই!

সকালে সালমান ফারুকী জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ৩১ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন আমার দুলাভাই। প্রায় ১৫ দিন আগে হাল্কা জ্বর হয়, সেটা আবার সেরেও গিয়েছিল। পরে আবারও জ্বর হয়, সঙ্গে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। ওই সময় আমরা বেশ চেষ্টা করেও সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করাতে পারিনি। সবার কথা ছিল, আগে করোনা রিপোর্ট, তারপর ভর্তি। অনেক উপর (প্রভাবশালী) থেকেও চেষ্টা করা হয়েছিল’।

তিনি বলেন, ‘শেষমেষ গত বৃহস্পতিবার জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দিয়ে আসেন। ওই সময় আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তির অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সেখানে সিট খালি না থাকায় হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি। বরং আমাদের রোগীকে বাসাতেই চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তখন আমরা চেষ্টা করেছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করোনার রিপোর্টটি হাতে পেতে।

তাহলে অন্তুত হয় করোনা হাসপাতাল, নয় সাধারণ কোনো হাসপাতালে ভর্তি করানো যেত। কিন্তু সিভিল সার্জন জানালেন, এক সপ্তাহের আগে সে রিপোর্ট আসবে না। তাই হাসপাতালে ভর্তি করা যায়নি’।

‘শুধু কী হাসপাতাল! আজ যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন, তখন ৩৩৩ হটলাইনে ফোন করে একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলাম। একটি অ্যাম্বুলেন্স এসেছিলও। কিন্তু উপসর্গের কথা জেনে নিয়ে যায়নি। চালক জানায়, পুলিশের নাকি নিষেধ আছে। পরে আবারও ৩৩৩ এ ফোন দিলাম। তখন জানানো হলো, এই উপসর্গের রোগীকে কেউ নিয়ে যাবে না। আপনারা নিজেরাই ব্যবস্থা করেন। কিন্তু রাস্তায় নেমে একটি রিকশাও পেলাম না। শ্বাসকষ্টে মুখটা নীল হয়ে উঠেছিল আমার দুলাভাইয়ের। পরে সেখানেই মারা গেলেন,’ বলেন অসহায় সেই আত্মীয়।

মুঠোফোনে কান্নারত সালমান প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘এ কেমন নিয়ম? একটা নমুনা পরীক্ষার ফল আসতে লাগে এক সপ্তাহ। এখন যদি রিপোর্ট আসে তাহলে দেখা যাবে, পরিবারের সবাই হয়তো করোনায় আক্রান্ত। আর যদি তিনি করোনা নেগেটিভ হয়ে থাকেন, তাহলে মানুষটা বিনা চিকিৎসাতেই মারা গেলেন। এই কষ্ট কী করে ভুলবো আমরা।

এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।