সরকারের দিকে তাকিয়ে গণপরিবহন মালিকরা
করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তার ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে চলছে সাধারণ ছুটি। এ ছুটিতে জরুরি পণ্য সংশ্লিষ্ট ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। মানুষের চলাচল সীমিত করতে বন্ধ রাখা হয়েছে গণপরিবহনও। যদিও শর্ত দিয়ে খোলা হয়েছে গার্মেন্ট। আগামী ৮ মে থেকে সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষায় গণপরিবহনের মালিকরাও। সরকার থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলেই আবারও সড়কে চলবে গণপরিবহন।
তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে কীভাবে রাস্তায় বাস চলবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো পরিকল্পনা হয়নি। সরকার চাইলে সেসব পরিকল্পনা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন গণপরিবহন মালিকরা।
এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালু সম্ভব নয়। বরং গণপরিবহন চালু হলে যাত্রীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। পরিকল্পনা ছাড়া পরিবহন চলাচল শুরু হলে তা ঝুঁকি আরও বাড়াবে।
করোনা প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় গত ২৪ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এতে ২৬ মার্চ থেকে সব গণপরিবহন সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে ছুটি দফায় দফায় বাড়ানো হলেও কমেনি করোনার প্রাদুর্ভাব।
রোববার(৩ মে) হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আরও দুজনের প্রাণ হারানোয় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৭ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৬৬৫ জন। এতে দেশে ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল নয় হাজার ৪৫৫ জনে। এই তথ্যের মধ্যেই আরেক দফা ছুটি বাড়তে পারে বলে আভাস মিলেছে।
এরই মধ্যেই সীমিত পরিসরের কথা বলে বেশ ভালোভাবেই চালু হয়েছে গার্মেন্টস কারখানা। লকডাউনের মধ্যেও ঈদের আগে শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হয়েছে দেশীয় কাপড়ের সবচেয়ে বড় বাজার নরসিংদীর বাবুরহাট। সেই সঙ্গে রেস্তোরাঁসহ কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতার পথে হাঁটছে সরকার। এসবের ধারাবাহিকতায় সরকার গণপরিবহন খুলবে আশা পরিবহন মালিকদের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা তো চাই গণপরিবহন চালু হোক। মালিক-শ্রমিক সবারই তো অবস্থা খারাপ। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও তো ভাবনার। তবে যেহেতু গার্মেন্ট খুলছে, বিমানও চলবে। ২/১টা জায়গায় বড় কাপড়ের হাটও খুলছে। রাজধানীতে ও গাজীপুরসহ শিল্প এলাকায় মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। স্বভাবত পরিবহনও সহসা চালু হতে পারে। তবে সিদ্ধান্ত সরকারের। আমরা তাকিয়ে আছি। অনুমতি মিললেই সড়কে আবারও চলবে গণপরিবহন।’
অনুমতি মিললে এই করোনা ঝুঁকির মধ্যে কী প্রক্রিয়ায় বাস চালানো সম্ভব? জবাবে তিনি বলেন, ‘বিমান যেভাবে চলবে, লোকসান সত্ত্বেও সীমিত পরিসরে চালু করা যেতে পারে।’ তবে সরকার সিদ্ধান্ত দিলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মও বাতলে দেবেন বলেও উল্লেখ করেন এ পরিবহন মালিক নেতা।
তবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘গার্মেন্ট, শিল্প কারখানায় নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের যাতায়াত। কিন্তু গণপরিবহনে এসব শ্রেণির মানুষের যাতায়াত কম। এই মুহূর্তে গণপরিবহন খুলে দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এটা কোনো সমীচীন সিদ্ধান্ত হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে যারা করোনায় আক্রান্ত তাদের কেস হিস্ট্রি শুনুন, অধিকাংশই অন্য জেলা থেকে গণপরিবহনে চড়ে স্ব-স্ব বাড়িতে চলে গেছেন।’ তবে পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকদের বাঁচতে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জেইউ/এফআর/এমএস