করোনাভাইরাস কাড়ল আরও দুজনের প্রাণ, নতুন শনাক্ত ৫৭১
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭০ জনে। আক্রান্ত হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৫৭১ জন। ফলে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল আট হাজার ২৩৮ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও ১৪ জন, সব মিলিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ১৭৪।
শুক্রবার (১ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচ হাজার ৯৫৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭৩টি। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭০ হাজার ২৩৯টি। নতুন যাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে আরও ৫৭১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ২৩৮ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও দুজন। এদের একজন পুরুষ, একজন নারী; একজন ষাটোর্ধ্ব, একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭০ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও ১৪ জন। ফলে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৭৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, আমাদের করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে প্রায় ৮০০ জন সুস্থ আছেন। মানে তাদের মধ্যে কোনো লক্ষণ, উপসর্গ নেই। কিন্তু তাদের পরপর দুটি টেস্ট করতে হয়। হয়তো তাদের কারও একটি টেস্ট হয়েছে, আরেকটি হয়নি, এ পর্যায়ে আছে। আবার কারও কারও হয়তো একটিও হয়নি, তবে লক্ষণ নেই। লক্ষণ, উপসর্গ সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হওয়ার পরই আমরা পুনরায় টেস্টগুলো করি। সুস্থ হওয়ার পথে এই ৮০০ আক্রান্ত ব্যক্তি বাসা ও হাসপাতালে রয়েছেন।
তিনি বলেন, যারা কোভিড-১৯ শনাক্ত হন, তারা কোনো দোষী ব্যক্তি নন। তারা অপরাধী নন। কিন্তু কোনো কোনো জায়গায়, কোনো সমাজে, পাড়া-মহল্লায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। তার পরিবারের মানুষজনকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।
নাসিমা সুলতানা বলেন, যেকোনো মুহূর্তে আপনি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এখন করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। কাজেই আজকে যে নেগেটিভ, কালকে যে পজিটিভ হবে না, সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কাজেই কাউকে হেয় করবেন না, কারও সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করবেন না। তাদের প্রতি মানবিক হোন।
‘অন্য যেকোনো অসুখের মতো এটাও একটা অসুখ। এটা সময়ের সাথে সাথে সুস্থ হয়। আমরা আগেও বলেছি, করোনায় আক্রান্ত ৮০ ভাগ মানুষেরই মৃদু সংক্রমণ হয়, তাদের লক্ষণ-উপসর্গ মৃদু থাকে। মাত্র ৩ থেকে ৫ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে গুরুতর লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে হাসপাতাল বা আইসিইউ সাপোর্ট লাগে।’
ব্রিফিংয়ের শুরুতে তিনি করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে, তাদের নাম উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
চার মাস আগে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ক্রমে গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। চীন পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সোয়া ৩৩ লাখ। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ ৩৪। তবে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। যদিও এরই মধ্যে সীমিত পরিসরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কিছু পোশাক কারখানা সীমিত পরিসরে খুলতে শুরু করেছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
পিডি/এমইউ/এইচএ/এমএস