খালে ঝাঁপিয়ে কুকুর ছানাকে বাঁচালেন পুলিশ কনস্টেবল
বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটার দিকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা গোলাপের দোকান এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি তল্লাশি করছিলেন নগর পুলিশের এসএএফ শাখার কয়েকজন সদস্য। হঠাৎ পাশের খালে ঝপ করে কিছু একটা পতনের শব্দ শুনতে পেলেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। তাদের একজন রাজিব কুমার কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে ময়লায় গিজগিজ করা খালে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সাঁতরে গিয়ে একটি পলিথিনের ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসলেন এক ফুটফুটে কুকুর ছানা। দূরে খালপাড়ে তখনো মা কুকুরটি দাঁড়ানো।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে জীবে প্রেমের এমন দৃশ্যের সাক্ষী হলেন কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকার কয়েকশ মানুষ। ইতোমধ্যেই সেই ঘটনার কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। সেখানে ধন্যি পাচ্ছেন পুলিশের এই সদস্য হাজারো ব্যবহারকারীর পক্ষ থেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আকরাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিকেলে কাপ্তাই-নোয়াপাড়া সড়কে দায়িত্ব পালন করছিলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। কেউ একজন পলিথিনে মুড়িয়ে একটি কুকুর ছানা খালে ফেলে দেন। পুলিশ সদস্যদের একজন বিষয়টি খেয়াল করে এগিয়ে যান। এ সময় পাশেই মা কুকুরটি খালপাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিল। পরে ওই পুলিশ সদস্য খালে নেমে বাচ্চা কুকুরটিকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে মা কুকুরের কাছে রেখে দেন। ওই খানে আমরা অনেকেই ছিলাম। কিন্তু কারও মাথায় যেটি আসেনি সেটিই করে দেখালেন ওই পুলিশ ভাই। আমরা সবসময় এমন মানবিক পুলিশই দেখতে চাই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানবিক ওই পুলিশ সদস্যের নাম রাজিব কুমার রায়। তিনি নগর পুলিশের এসএএফ শাখার কনস্টেবল। আছেন দামপাড়া পুলিশলাইন্সে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন এই পুলিশ সদস্য।
রাজিব কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পালন করছিলাম গোলাপের দোকান এলাকায়। হঠাৎ পাশের খালে ঝপ করে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। বুঝতেই পারিনি সেটি কী। কিন্তু পলিথিনটির ভেতর কিছ একটা নড়াচড়া করতে দেখে খালে ঝাঁপালাম। সাঁতরে গিয়ে দেখি ওটি একটি কুকুরের বাচ্চা। পাড়ে দাঁড়িয়ে মা কুকুরটি ডেকেই যাচ্ছে। উদ্ধার করে বাচ্চাটিকে তার মায়ের কাছ দিলাম। হোক না সেটি কুকুরের বাচ্চা, একটি জীবনতো।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি পোস্টে ওই পুলিশ সদস্যের এমন মানবিক আচরণে তাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।
ফররুখ আহমদ সামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘জীবে দয়া করে যেই জন...সেই জন সেবিছে ঈশ্বর...He prayed best who loved best...।’ সাঞ্জিত বড়ুয়া লিখেছেন, ‘প্রশংসা করার কোনো ভাষা পাচ্ছি না,,, উপরাওয়ালা আপনাকে রাখুক।’
মো. নায়িম লিখেছেন, ‘অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো আর সেই সাথে কামনা করি পুলিশের সেই হারানো গৌরব ফিরে আসুক।’
মো. যোবায়দুল ইসলাম লিখেছেন, ‘কিছু ভালো পুলিশ সদস্যদের জন্য আজও ভালো স্বপন দেখি তার প্রমাণ এইটা।’
জানতে চাইলে নগরের চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর খন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরাও মানুষ, আমাদেরও মন আছে, মানবিকতা আছে। বর্তমান সরকার পুলিশকে একটি মানবিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে রাতদিন কাজ করছে। এরই কিছু প্রতিচ্ছবি আমরা সমাজেও দেখতে পাচ্ছি।’
আবু আজাদ/বিএ