রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় অস্থায়ী দোকান বেড়েছে
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রথম পর্যায়ে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটির ঘোষণা কয়েক দফা বাড়িয়ে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। এর মূল কারণ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখা নিশ্চিত করা।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় না নিয়ে এর মধ্যেও প্রতিদিন রীতিমত বাজারে ভিড় জমাচ্ছে অসেচতন মানুষ। তবে যারা সচেতন তারা বাসায় থেকে খুব কম বের হচ্ছেন। প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ক্ষেত্রে পাড়া-মহল্লার স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান থেকে সংগ্রহ করছেন। ফলে এসব পাড়া-মহল্লায় দোকানে বেড়েছে বিক্রি। যে কারণে ভ্যানে করে সবজি, নিত্যপণ্যর দোকানও বেড়েছে পাড়া-মহল্লায়। এসব ভ্যানের অস্থায়ী দোকানে সবজি, নিত্যপণ্যসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। যেসব পাড়া-মহল্লায় আগে দু-একটি ভ্যানে এসব বিক্রি করতে দেখা যেত, সেসব পাড়া-মহল্লায় এখন প্রায় ১০-১৫টিরও বেশি ভ্যান দেখা যাচ্ছে।
আগে যারা ব্যবসায়িক বিভিন্ন পেশায় যুক্ত ছিলেন, তাদের এখন কর্মহীন হয়ে পড়ায় ভ্যানগাড়ি দিন চুক্তি ভাড়া নিয়ে পাড়া-মহল্লায় ভ্রাম্যমাণ এসব অস্থায়ী দোকান দিয়েছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এমন ভ্যানগাড়িতে অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ দোকান দিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছেন। এসবের মধ্যে সবজি বেশি বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যও রয়েছে।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় এমন এক অস্থায়ী দোকানি মনির হোসেন বলেন, আমি আগে একটি খাবার হোটেলে কাজ করতাম। বর্তমানে সেই চাকরি আর নেই, হোটেল বন্ধ। তাই দিনচুক্তি একটি ভ্যান ভাড়া নিয়ে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে সবজি বিক্রি করি। প্রতিদিন বাজার থেকে এগুলো কিনে এনে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি। আমার মতো অনেকেই আছে যারা এভাবে ভ্যানে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে নানা পণ্য বিক্রির ব্যবসা গুরু করেছেন।
মনিরের দোকানে সবজি কিনছিলেন বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সচেতন হয়ে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাজারে যাই না। ইদানিং পাড়া-মহল্লার মধ্যেই ভ্যানগাড়িতে অনেকগুলো অস্থায়ী দোকান হয়েছে, সেগুলো থেকেই আমরা প্রয়োজনীয় পণ্য কিনি। আগে দু-তিনটা এমন ভ্যানগাড়িতে অস্থায়ী দোকান ছিল, এখন আশপাশের গলি মিলিয়ে প্রায় ১৫-২০টি অস্থায়ী দোকান হয়েছে। এরা আগে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত ছিল এখন কর্মহীন হয়ে পড়ায় ভ্যানে করে তারা এসব বিক্রি করে।
অন্যদিকে যদিও কাঁচাবাজার, মাছ বাজার, নিত্যপণ্য বাজারে গিয়েও দেখা মেলে ঘেঁষাঘেঁষি করে দোকানে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। তারা কোনোভাবেই করোনা পরিস্থিতিতে নিজেরা সচেতন হচ্ছেন না, পাশাপাশি অন্যদের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।
এছাড়া ত্রাণ নিতে, টিসিবি থেকে পণ্য কিনতে, ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রিতে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। রীতিমত ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে কার আগে কে চাল নেবে সেই চেষ্টা। যে কারণে সংশ্লিষ্টরা বার বার বলার পরেও ব্যর্থ হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে।
বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় অবস্থিত নিত্যপণ্যের দোকানগুলো প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। এই নিয়মগুলো মানা হলেও নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে মানুষের ভিড় কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। এতে করে তাদের পাশাপাশি তাদের সংস্পর্শে থাকা অন্যদেরও বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি।
এদিকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আসন্ন রমজানে ফুটপাতে কোনো ধরনের ইফতার তৈরি ও বিক্রি যেন না হয় পুলিশ সদস্যদের সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
বুধবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সব রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, বিশেষায়িত ইউনিট ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের তিনি এ নির্দেশনা দেন।
বেনজির আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রমজানে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যেন কোনো কারণে পণ্যের মূল্য না বাড়ে। পণ্যের কালোবাজারি রোধ এবং খাদ্যে ভেজাল দেয়া বন্ধ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’
এএস/এমএসএইচ/পিআর