স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি সিরাজগঞ্জের ১৩ বীরাঙ্গনা
মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে সিরাজগঞ্জের ১৩ বীরাঙ্গনা মায়েরা খুশি হলেও অপর ৫ মা এই স্বীকৃতি না পাওয়ায় তাদের আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে। ১৩ বীরাঙ্গনা মায়ের দাবি শুধু বেঁচে থাকা ৫ বীরাঙ্গনা মাতা নয় যারা ইতোমধ্যে মারা গেছেন তাদেরও এই স্বীকৃতি দেয়া হোক। স্বীকৃতি বঞ্চিতদের সন্তানেরা মুক্তিযোদ্ধার গৌরব নিয়ে সমাজে মাথা উচু করে বাঁচবে এই দাবি সিরাজগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিসহ বীরাঙ্গনা মাতাদের।
সরকার দেশে বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি প্রদান করে তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় সিরাজগঞ্জে ১৩ বীরাঙ্গনার নাম রয়েছে। তালিকাভুক্তরা হলেন, সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার মতি সাহেবের ঘাট এলাকার সমসের আলীর স্ত্রী আয়মনা বেগম, সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর গ্রামের মৃত হোসেন আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম, বনবাড়িয়া তেতুলিয়া গ্রামের আলম সেখের মেয়ে জয়গুন বেগম, পিটিআই স্কুল রোডের শামছুল আলমের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম (ধুলি), সয়াধানগড়া মহল্লার আব্দুল মতিনের স্ত্রী মাহেলা বেগম, কান্দাপাড়া গ্রামের হামিদা বেগম, সয়াধানগড়া গ্রামের মৃত শাহাজাহান আলীর স্ত্রী সামছুন্নাহার, নতুন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামের মৃত হারান আলী সেখের স্ত্রী সূর্য বেগম, চক কোবদাসপাড়া গ্রামের মৃত রিয়াজ আলীর স্ত্রী রহিমা বেওয়া, রানীগ্রাম গ্রামের আব্দুল মান্নানের স্ত্রী আছিয়া বেগম, দত্তবাড়ী বিন্দুপাড়া গ্রামের কমলা বেগম, ঝাঐল চানপুর গ্রামের মৃত হরিপদ দের স্ত্রী রাজুবালা দে ও রানীগ্রাম ক্লোজার এলাকার শুকুর আলীর স্ত্রী সামেনা বেগম।
দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৪ বছর হলো। ৭১ এর সময় পাক হানাদার বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত দেশের সকল বীরাঙ্গনাদের মতো সিরাজগঞ্জের ২১ জন জীবিত বীরাঙ্গনা মাতা অভাব-অনটন, রোগ ব্যাধি আর নানা তাচ্ছিল্য নিয়ে তাদের জীবন পার করে আসছিলেন। এদের মধ্যে ৩ জন ইতোমধ্যে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। যে ১৮ জন বীরাঙ্গনা মাতা বেঁচে আছেন, তাদের মধ্যে সরকার ১৩ জনের নাম তালিকায় প্রকাশ করেছেন।
জীবিত মাতাদের মধ্যে বনবাড়িয়া তেতুলিয়া গ্রামের মৃত খোরশেদ আলীর স্ত্রী করিমন বেগম, কালিয়া হরিপুর গ্রামের হাতেম আলীর স্ত্রী হাজেরা বেগম, সয়াধানগড়া গ্রামের আকবর আলীর স্ত্রী রাহেলা বেগম, নতুন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রামের কসিম উদ্দিনের স্ত্রী আয়েশা বেগম ও সয়ধানগড়া গ্রামের রুস্তম আলীর স্ত্রী নুরজাহান বেগম এই স্বীকৃতির তালিকায় স্থান পাননি।
এছাড়াও সয়াধানগড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের স্ত্রী জোৎস্না খাতুন, রহমতগঞ্জ গ্রামের মৃত শুকুর আলীর স্ত্রী বাহাতন বেগম ও রানীগ্রাম গ্রামের আব্দুল মান্নানের স্ত্রী আছিয়া বেগম দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের নামও এই তালিকায় স্থান পায়নি। দেশের জন্য যারা তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন অনেকের নাম তালিকায় স্থান না পাওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
তালিকায় স্থান না পাওয়া হাজেরা খাতুন জানান, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বীরাঙ্গনাদের মাতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাদের সকল ধরনের পুর্নবাসনসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সমান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবারসহ হত্যার মাধ্যমে তাদের সকল আশা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর বঙ্গবন্ধুর মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছিল। কিন্তু অনেকেরই এই তালিকায় স্থান না পাওয়ায় তাদের মধ্যে অনেকটাই হতাশা বিরাজ করছে। শুধু জীবিত নয়, যারা মারা গেছে তাদের নামও অর্ন্তভুক্ত করে নতুনভাবে তালিকা প্রস্তুতের আহ্বান জানান তিনি।
তালিকায় স্থান পাওয়া বীরাঙ্গনা কমলা খাতুন জানান, মুক্তিযোদ্ধার সমান মর্যাদা পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি। তাদের সন্তানেরা এখন আর সমাজের কাছে অবহেলিত থাকবে না। একই সঙ্গে দীর্ঘ কষ্টের জীবনের ইতি হতে চলেছে। যে কারণে তিনিসহ জেলার ১৩ বীরাঙ্গনা মাতা এখন বেজায় খুশি। কিন্তু তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া ৫ বীরাঙ্গনা এই তালিকায় স্থান না পাওয়ায় আনন্দে ভাটা পড়েছে। বাদ পড়া বীরাঙ্গনাদের নাম তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে তাদের কষ্ট দূর করবে।
তালিকায় স্থান পাওয়া সূর্য বেগম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বধীনতার ৪৪ বছর পর হলেও তাদের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়ে অনেকদিন পর নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এখন থেকে আর পিছনে কি হয়েছে তা আর দেখতে যাবেন না। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন থেকে শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলবেন। তবে যারা এই তালিকায় স্থান পায়নি তাদের তালিকাভুক্ত করারও আহ্বান জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার সাবেক কমান্ডার গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী জাগো নিউজকে জানান, দীর্ঘদিন পরে হলেও বর্তমান সরকার এই মাতাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সমান মর্যাদা প্রদান করায় সকল মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ। পাশাপাশি তালিকা থেকে বাদ পড়া বীরাঙ্গনা মাতাদের তালিকাভুক্ত করে সঠিক তালিকা প্রণয়ন করারও আহ্বান জানান তিনি।
স্বীকৃতি পাওয়া সিরাজগঞ্জের ১৩ বীরাঙ্গনার তালিকা
এসএস/আরআইপি